আমাদের ভারত, ৫ জানুয়ারি: সন্দেশখালির ঘটনার কড়া প্রতিক্রিয়া দিলেন বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শুক্রবার তিনি এক ভিডিওবার্তায় বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকা আজ মুক্তাঞ্চল হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে লোকেরা এখানে সোনা, মাদকদ্রব্য নিয়ে আসছে। এখান থেকে পাচার করছে গরু, অন্যান্য জিনিস। বিরাট টাকার লেনদেন হচ্ছে। সরকারি টাকা লুঠ হয়ে যাচ্ছে।
এসব যাতে চলতে পারে তাই টিএমসি সরকার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিতে দিচ্ছে না। বিভিন্ন জিনিস পাচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চায়েতের টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। সীমান্ত সুরক্ষিত হলে দেশ সুরক্ষিত হবে, যে কথা আমরা বার বার বলেছি। আজ পরিস্কার হয়ে গেল যে কেন্দ্রীয় বাহিনীও সুরক্ষিত নয়। যারা এসব বেআইনি কাজ করে তৃণমূলকে অর্থ যোগাচ্ছে, মমতা ব্যানার্জির সরকার বারবার তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। তাঁর কাছের অফিসারদের বাঁচাতে তিনি ধর্ণা দেন। সিবিআই কমপ্লেক্সে তাঁর নেতাদের নিয়ে গেলে দলের ছেলেরা এলাকা ঘিরে রাখে।
সত্য উদ্ঘাটনের কাজে, দোষীদের শাস্তি দেওয়ার কাজে বারবার বাধা দেওয়া হচ্ছে। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আজ আমরা দেখলাম। রক্তাক্ত ঘটনার মাধ্যমে সেটা লোকের চোখে এসেছে।”
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিলেন বিজেপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। তিনি মন্তব্য করেছেন, “আজ আমাদের বাংলার একটা কালো দিন।“
শুক্রবার তিনি এক ভিডিওবার্তায় বলেন, “আদালতের নির্দেশে সন্দেশখালিতে কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্তে গিয়েছে। সেই তদন্ত যাতে না হয়, যাতে চাপা পড়ে যায়, তার জন্য মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এলাকার মহিলা-সহ লোকজনকে আগে বাড়িয়ে দিয়েছেন। ভুল বুঝিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আটকে দেওয়া হয়েছে। তাদের আক্রমণ করার জন্য এগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
লকেট চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, আমরা কোন জগতে বসবাস করছি? লজ্জার কথা! ইডি, সিআইডি-র তদন্তে সুরক্ষা দেওয়ার কথা রাজ্য সরকারের। তা না করে গুণ্ডাবাহিনী, মাস্তানবাহিনীকে লেলিয়ে দিচ্ছে? কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছেন এই বাংলাকে? আমরা কোথায় বাস করছি? এতদিন আমাদের ওপরে হামলা হত। এখন আর শুধু আমাদের ওপরে নেই, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসারদের ওপর হচ্ছে! এর পর তো দেখব প্রধানমন্ত্রী বা যে কেউ আসুন তাঁরাও সুরক্ষিত নন। যা খুশি করতে পারে!
মহিলাদের লেলিয়ে দেওয়ার ঘটনায় মহিলা হিসাবে আজ খুব খারাপ লাগছে। লজ্জার কথা! বাংলার মানুষ ২০২৪-এ এর জবাব দেবে। আর যাঁদের ওপর আক্রমণ হয়েছে, তাঁরাও মানুষ। আমরা সেই পরিবারগুলোর সঙ্গে আছি। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুরুত্ব-সহকারে বিষয়টি দেখছেন। এদিনের ঘটনার প্রতিবাদ হবেই। এর আওয়াজ উঠবেই। এর শাস্তি পেতেই হবে।”
ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার কড়া সমালোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক।
তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “এই আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর। কেন্দ্র এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। কেন বার বার পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।”
তাঁর কথায়, “সন্দেশখালির এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কোনও রাজ্যে যখন কোনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আদালতের নির্দেশে তদন্তের জন্য বিভিন্ন স্থানে যায়, সেই তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের সুরক্ষার দায়িত্ব সেই রাজ্যের সরকারের। কিন্তু আমরা বার বারই দেখেছি পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন নিরপেক্ষ তদন্তকারী সংস্থার উপর আক্রমণ হয়েছে। এই আক্রমণ শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার উপরে নয়, এই আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আক্রমণ। আজ যাঁদের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে, তাঁদের পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি।”

