আমাদের ভারত, মেদিনীপুর, ১১ সেপ্টেম্বর: পেঁপে, লেবু, বাসকের পর এবার অবিশ্বাস্য বিষয় লক্ষ্য করা গেলে আমের ক্ষেত্রে। আমের জয়ায়ুজ অঙ্কুরোদগমের ঘটনা দেখে অনেকটাই চমকিত বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাতের তালুতে যেমন লোম গজানো অসম্ভব তেমনটাই ঘটেছে আমের মধ্যে এই অঙ্কুরোদগমের ক্ষেত্রে। দিন কয়েক আগে বর্ধমানে গাছে ঝুলন্ত আমের মধ্যে দেখা গেল জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম (ভিভিপেরি জার্মিনেশন)।এই ঘটনা প্রথমে নজরে পড়ে ড: বাবলু মন্ডলের। তিনি বাংলার শিক্ষক হলেও বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর যথেষ্ট ঝোঁক রয়েছে। এই ধরনের ব্যতিক্রমী জিনিস তাঁর নজরে আসার পর তিনি ছবি সহ বিষয়টি তাঁর পরিচিত ও বন্ধু স্থানীয় উদ্ভিদ বিজ্ঞানী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা ও বনবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড: অমল কুমার মন্ডলের নজরে আনেন। যা দেখে অধ্যাপক ড: অমলকুমার মন্ডলের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, “এ ঘটনা বিরলতম”।
অমল কুমার মন্ডলের কথায়, উদ্ভিদকুলের মধ্যে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা নানা ব্যতিক্রমী ঘটনার মধ্যে এটিও একটি বিরলতম ঘটনার উদাহরণ। তিনি আরও বলেন, আঁটি থেকে আম গাছ হয় আর কলম করে আমগাছ তৈরির কথা আমাদের সবার জানা, কিন্তু গাছে ঝুলন্ত আম থেকে আমের চারা বেরিয়েছে এ দৃশ্য সাধারণত দেখা যায় না। অমলবাবুর মতে, সুন্দরবন বা ভিতরকণিকায়, যেখানে ৯০ শতাংশ উদ্ভিদের মধ্যে জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম ঘটে, সেখানেও এ দৃশ্য বিরল। তাহলে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল? অমলবাবুর মতে, এর পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। সেগুলি হল, ফলের মধ্যে বীজের অতিশীঘ্রই পূর্ণতাপ্রাপ্তি, অঙ্কুরোদ্গমের জন্য যে হরমোনের প্রভাব রয়েছে তার দ্রুত ক্ষরণ, আমের বোঁটার অংশ অত্যধিক শক্ত, ফলে আমটি পরিপক্ক হলেও পড়েনি, গাছটি জলা জায়গায়। ফলটি পড়ে গেলে পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অস্বাভাবিক জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, লবনাম্বু উদ্ভিদের জন্ম টেরেস্ট্রিয়াল উদ্ভিদ থেকেই। শুধুমাত্র পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য নানা পরিবর্তন ঘটিয়েছে তারা। এটাও তেমন অভিযোজনের ফলে ঘটে থাকতে পারে। অসময়ে গাছে ফল আসার কারণেও এমনটা ঘটে থাকতে পারে। তবে এ বিষয়ে যে বিশদ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে, তাও জানিয়েছেন অমলবাবু। কারণ, তাঁর মতে এ ঘটনা অতীব বিরল। যা উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক- সকলকেই ভাবিয়ে তুলেছে। পূর্ণাঙ্গ গবেষণা হলে নতুন দিগন্তও উন্মোচিত হতে পারে বলে মত অমলবাবুর।