SIR ও নাগরিকত্ব নিয়ে সব বিভ্রান্তি দূর করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার, জবাব দিলেন বিরোধীদের

আমাদের ভারত, ৩ সেপ্টেম্বর: কলকাতা আইসিসিআর-এ এক দেশ এক নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আজ খুব সহজ সরল ভাবে এস আই আর তথা নাগরিকত্ব সংক্রান্ত একাধিক বিভ্রান্তি দূর করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। মোদী সরকার নাগরিকত্ব ইস্যূতে একটি নতুন গেজেট নোটিফিকেশন জারি করেছে সেটা নিয়েও বক্তব্য রাখেন তিনি।

এস আই নিয়ে বিরোধীরা প্রতিবাদে সরব। তারা বলছেন, এর ফলে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে। মানুষকে হেনস্তা করা হচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে আজ এসআইআর ঠিক কি, তা খুব সহজ করে বোঝালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। দূর করলেন একাধিক বিভ্রান্তি। তিনি বলেন, “দুটো লাইনে এসআইআর বুঝে নিন, এটা নিয়ে বিভ্রান্তি নেই। ২০০২-০৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে শেষ এসআইআর হয়েছিল। ২০০২-০৩ সালে ভোটার লিস্টে আপনার নাম থাকলে আপনি ওকে। অর্থাৎ আপনার নাম এবারেও উঠে যাবে। তবে আরেকজন বলতে পারেন সেই সময় আপনার বয়স ১৮ বছর হয়নি। অর্থাৎ ২০০৩ সালে ১৮ বছর বয়স হয়নি বলে সেই সময় ভোটার লিস্টের নাম ছিল না‌। পরে তার ১৮ বছর হয়েছে। তেমন হলে আপনার মা-বাবার নাম ছিল। সেই প্রমাণ দেখালেই আপনার নাম উঠে যাবে।”

এরপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কটাক্ষ করে বলেন, “কিন্তু আপনি বলছেন ২০০২ সালে আমার নাম নেই। এখন আমার নাম তুলতে হবে। তার মানে কি? বলছেন আপনার বাবা মায়ের নামও নেই। তার মানে কি? প্রশ্ন তাহলে আপনি কোথা থেকে এলেন? খেজুর গাছ থেকে টপকালেন, নাকি মাটি খুঁড়ে বেরোলেন? সেটা আগে বলুন। এর দুটো অপশন হতে পারে, হয় আপনি অনুপ্রবেশকারী আর না‌ হয় অত্যাচারিত হিন্দু।”

এই অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আসা‌ হিন্দুদের মোদী সরকার আরো একটা বড় পদক্ষেপ করেছে। সেই পদক্ষেপের বিষয়টি বলতে গিয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেন, “যদি আপনি হিন্দু হন। সি এএ এর মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। আপনি ভারতবর্ষের ভোটার হবেন। এছাড়াও তিনি জানান, সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার যে গেজেট নোটিফিকেশন করেছে। তাতে বলা হয়েছে, আপনি ২০১৪ সালের মধ্যে ভারতে আসতে পারেননি, ২৪ সালের মধ্যে এসেছেন। আপনি ভারতবর্ষেই থাকবেন। চলে যেতে হবে না। কিন্তু প্রশ্ন তাহলে আপনার নাগরিকত্ব কি হবে? সিএএ তে কোনও পরিবর্তন আসেনি, ফলে আপনি সিএএ তে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন।

কিন্তু সুকান্ত মজুমদার বলেন, সিএএ হবার আগেও ভারতবর্ষের নাগরিক হবার অন্য আরেকটি আইন ছিল। এখনো সেটি বজায় আছে। যেমন গায়ক আদনান স্বামী এখন ভারতবর্ষের নাগরিক। তিনি তো সিএএ তে অ্যাপ্লাই করতে পারেননি, কারণ তিনি ধর্মে মুসলিম। তাহলে তিনি ভারতবর্ষে নাগরিক হলেন কিভাবে? ভারতবর্ষের নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন বলছে, প্রসেস অফ ন্যাচারালাইজেশন-এর মাধ্যমেও ভারতের নাগরিকত্ব পেতে পারেন। তার জন্য ১১ বছর আপনাকে ভারতবর্ষে থাকতে হবে। তারপর তিনি অ্যাপ্লাই করবেন আর আপনি নাগরিক হবেন।

এর অর্থ আজকের গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে বা ভারতবর্ষে ঢুকে যাওয়া কোনো হিন্দুকে আর ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। তারা যদি থেকে যায় আর ১১ বছর পর তারা ভারতবর্ষের আইন অনুযায়ী নাগরিকত্বের অ্যাপ্লাই করে নাগরিক হতে পারবে। তিনি বলেন, এই আইন তাদের তৈরি করা না, অনেক আগে থেকেই এই আইন ছিল। সেই আইন অনুসারে ১১ বছর অটোমেটিক্যালি আজকের শরনার্থী হিন্দুরা ভারতের নাগরিক হবার আবেদন করতে পারবে।

তবে তিনি জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আগামী দিনে আবেদন জানাবেন যে সিএএ-র মধ্যে পরিবর্তন এনে যেনো তাদের সিএএ–র মাধ্যমেই ভারতের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়, যাতে তাড়াতাড়ি তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া যায়া।

তবে আজকের এই নোটিফিকেশনের মাধ্যমে একটি বিষয় নির্দিষ্ট হয়ে গেল, ২০২৪ সাল পর্যন্ত নিপীড়িত হিন্দু, দলিত, নমঃশূদ্র, মতুয়া ভাইরা যারা এপারে এসেছেন তাদের আর রাত্রিবেলায় দরজায় গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ ঠকঠক করে বলতে পারবে না ভোটার কার্ড দেখান, আধার কার্ড দেখান। সেই ক্ষমতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশের কাছ থেকে নরেন্দ্র মোদী সরকার অমিত শাহের মাধ্যমে কেড়ে নিল। যারা নির্যাতিত হয়ে এসেছেন তারা গর্বের সাথে এখানে থাকতে পারবেন ও পরে নাগরিকত্ব পাবেন বলে আশ্বস্ত করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *