তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে ৭ দফা দাবিতে দুর্গাপুরের এসবিএসটিসির ডিপোতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি অস্থায়ী শ্রমিকদের

জয় লাহা, দুর্গাপুর, ২১ সেপ্টম্বর: অস্থায়ী শ্রমিকদের মজুরি ও কাজ নিয়ে গত কয়েকমাস ধরে টানাপোড়েন চলছিল। এবার সমকাজে সমবেতন, মাসে ২৬ টা হাজিরা সহ ৭ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে কর্মবিরতি শুরু করল অস্থায়ী শ্রমিকরা। আর তার জেরে দুর্গাপুর ডিপো থেকে বেশ কয়েকটি রুটে সরকারি বাস পরিষেবা থমকে গেল। চরম দুর্ভোগ ও হয়রানিতে পড়ল সাধারণ যাত্রীরা। একই সঙ্গে আরও লোকসানের মুখে পড়ল রাজ্য পরিবহন নিগমের এসবিএসটিসি সংস্থা।

এসবিএসটিসি সুত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েকবছর ধরে লোকসানে চলছে সংস্থা। তার ওপর করোনা মোকাবিলায় খরচের বহর যেমন বেড়েছে, তেমনই লোকসানের বহরও বেড়েছে। লকডাউনে বিভিন্ন রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিক, তীর্থযাত্রী পড়ুয়া নিয়ে যাওয়া আসার কাজ করেছে। প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষের বেশি মানুষকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছানো হয়েছে। সম্প্রতি ক্রমবর্ধমান জ্বালানি তেল। বেড়েছে যান্ত্রাংশের দামও। তারপরও বাস ভাড়া বৃদ্ধি হয়নি। আনলক পর্যায়ে ৩৫৭ টি রুটে ৯০০ বাস চলেছে। বাস চললেও যাত্রী ছিল হাতেগোনা। তার খরচ গুনতে হয়েছে রাজ্যকে। আর তার জেরে লোকসানের বহর বেড়ছে।

জানা গেছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য বাড়তি খরচের বহর বেড়েছে। লকডাউনের পর লোকসানের বহরও ক্রমবর্ধমান। তার সঙ্গে সংস্থায় অফিসের কাজ ও পরিবহন বিভাগে প্রায় ১৭০০ ঠিকাকর্মী রয়েছে। অফিসের কাজ ছাড়া বাকি ঠিকাকর্মীদের ‘নো-ওয়ার্ক, নো-পে’র ভিত্তিতে মজুরি দেওয়া হয়। বেতনের দরুন রাজ্য সরকার মাসে ১২ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। তারপরও রাজ্যের এই পরিবহন শিল্প কার্যত লাটে উঠেছে। ‘আমদানি আঠ আনা খরচা রুপইয়া’ মত অবস্থা দাঁড়িয়েছে রাজ্যের এই পরিবহন সংস্থাটিতে। আয় কম খরচ দ্বিগুন। জানা গেছে, মাসে সংস্থার ব্যায় হয় ৩০ কোটি। অথচ আয় হয় ১৫-১৬ কোটি টাকা। ফলে দিনের পর দিন বাড়ছে লোকসানের বহর বাড়ছে।

চলতি অর্থবছরে লোকসানে জর্জরিত এই সংস্থাটি। সম্প্রতি একের পর এক রুটে বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আগস্টের গোড়াতে রাজ্যের বেশ কয়েকটি রুটে প্রায় শতাধিক বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখনও আশঙ্কায় আরও কয়েকটি রুটের পরিষেবা। জানা গেছে, তুলনামূলক খুব কম আয় সম্পন্ন রুটে বাস পরিষেবা বন্ধ করার সিদ্ধন্ত নিয়েছে সংস্থাটি। আর এখানেই  প্রশ্ন উঠেছে। এসবিএসটিসিতে প্রায় সাড়ে ৬০০ সচল বাস রয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার’শর মত বাস বিভিন্ন রুটে চলছে। জানা গেছে, কলকাতা রুটের বাসে তুলনামূলক আয় বেশি হয়। আচমকা বাস বন্ধে রাজ্যের এই সংস্থাটির ভবিষ্যত নিয়ে তুমুল জল্পনা শুরু হয়েছে। তেমনই কাজ নিয়ে দিশাহারা ঠিকাশ্রমিকরা। বাস বন্ধ হওয়ায় কাজ কম মিলছে বলে অভিযোগ। ফলে ওইসব ঠিকাশ্রমিকরা আয় কম হওয়ার শঙ্কায় ভুগছে। সব মিলিয়ে সংস্থার ভবিষ্যত নিয়ে চরম অনিশ্চিয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার দক্ষিণবঙ্গ রাট্রীয় পরিবহন সংস্থার (এসবিএসটিসি) দুর্গাপুর ডিপোতে ৭ দফা দাবিতে আইএনটিটিইউসির ব্যানারে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করে
অস্থায়ী শ্রমিকরা। আর তাতেই দুর্গাপুর ট্রাঙ্করোড বাস ডিপো থেকে বেশ কয়েকটি রুটে বাস চলাচল অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে পড়ে। বাস ডিপোতে আইএনটিটিইউসি’র নামে ওই সংগঠন অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে। ডিপোতে প্রায় ২০০ জন অস্থায়ী কর্মী অবস্থান বিক্ষোভে অংশ নেন কাজ বন্ধ করে। আন্দোলনের জেরে দুর্গাপুর থেকে বেশ কয়েকটি রুটে বাস পরিষেবা থমকে যায়। ফলে দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হয় সাধারণ যাত্রীরা।

আন্দোলনকারীদের পক্ষে সনৎ কুমার দে ও গৌতম মুখার্জি প্রমুখ জানান,
“১০১২-১৩ সালের সমূহ অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ করতে হবে। সম কাজে সম বেতন দিতে হবে। প্রত্যেক অস্থায়ী কর্মচারীদের ২৬ টা হাজিরা দিতে হবে। সমবেতন ছুটি মঞ্জুর করতে হবে। ছাঁটাই কর্মীদের পুনঃনিয়োগ করতে হবে। বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি চালু করতে হবে। এসবিএসটিসির নির্ধারিত সমূহ পরিষেবা চালু করতে হবে।”  বিক্ষোভকারীরা হুঁশিয়ারি দেন, “কর্তৃপক্ষ দাবি না মানলে এই অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে।”

এদিকে আন্দোলনকারীদের ব্যানার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস কোনো রকম বন্ধের রাজনীতি সমর্থন করে না। তারপরও তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নামে কিভাবে এধরনের আন্দোলনে সামিল হল তারা? এসবিটিসির আইএনটিটিইউসি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণা ঘোষ জানান, “কে বা কারা এধরনের কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করেছে জানা নেই। এধরনের আন্দোলনে দলের সমর্থন নেই। বিষয়টি দল দেখছে।”

পশ্চিম বর্ধমান জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি অভিজিৎ ঘটক জানান, “বেশ কয়েকটি ডিপোতে আজ এই আন্দোলন হয়েছে শুনলাম। এই আন্দোলনে আমাদের কোনো রকম সমর্থন নেই। দলের নাম নিয়ে কে বা কারা এধরনের আন্দোলন করল, বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্ব দেখছে।”

এসবিসিএসইসির চেয়ারম্যান সুভাষ মন্ডল জানান, “টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিতে এজেন্সির মাধ্যমে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ হয়েছিল। তাতে বেশ কিছু শর্ত ছিল। ওই শর্তে শ্রমিকরা কি কি দাবি করতে পারে, সেটাও উল্লেখ্য ছিল। শর্ত অনুযায়ী এদিনের আন্দোলনকারীদের কোনো দাবি নেই। তাছাড়া, এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছিল। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট এজেন্সির।” 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *