এবছর উমাকেই কুমারী রূপে পুজো করল বেলুড় মঠ

আমাদের ভারত, ২৪ অক্টোবর: মা দুর্গা চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে চারদিনের জন্য এসেছেন বাপের বাড়ি। চারদিনের মধ্যে একদিন দেবীকে কুমারী রূপেও পুজো করে থাকেন ভক্তরা। মহাশক্তির সুর্নিদিষ্ট এক অনিন্দিতা রূপময়ী আকৃতির নামই কুমারী। কারণ কুমারী শক্তিই সৃষ্টির মূল বেদি। দেবতাকে কুমারী রূপে কল্পনা করার প্রথা বহু প্রাচীনকালের। মহাভারতে  ভীষ্মপর্বে অর্জুন দেবী কুমারীর পুজো করেছিলেন। মৎস্য  পুরাণের ১০১ তম অধ্যায়ের ২৭ নম্বর শ্লোকে বলা হয়েছে ‘নবমীতে একাহারী থাকিয়া শক্তি অনুসারে এক একটি কন্যাকে ভোজন করাইয়া আসন ও স্বর্ণ খচিত বস্ত্র ও কঞ্চুক দান করিবে।

কুমারী পুজো সাধারণত দুর্গাপুজোর মহাষ্টমীর দিনেই করা হয়, তবে কোথাও কোথাও নবমী তিথিতে হয়ে থাকে। বেলুড় মঠে পাঁচ থেকে সাত বছরের একজন সুলক্ষণা কন্যাকে পুজোর জন্য নির্বাচন করা হয়। আজ যে কন্যাকে কুমারী রূপে পুজো করা হয় তাকে উমা দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়।

কিন্তু কী কারণে উমা দেবী জ্ঞানে পুজো হল?

আসলে এক এক বছরের কুমারীকে এক এক নামে ও দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়।  কুমারী পুজোর জন্য যে কন্যাকে নির্বাচন করা হয় সেই কন্যার বয়স অনুযায়ী সেই দেবীজ্ঞানে তার নামকরণ করা হয়।

যেমন- এক বছরের বালিকাকে সন্ধ্যা, দুই বছরের বালিকাকে সরস্বতী,  তিন বছরের বালিকাকে ত্রিধা, চার বছরের বালিকাকে কালিকা, পাঁচ বছরের বালিকাকে সুভগা, ছয় বছরের বালিকাকে উমা, সাত বছরের বালিকাকে মালিনী,  আট বছরের বালিকাকে কুব্জিকা, নয় বছরের বালিকাকে কালসন্দর্ভা, দশ বছরের বালিকাকে অপরাজিতা, এগারো বছরের বালিকাকে রুদ্রাণী, বারো বছরের বালিকাকে ভৈরবী,  তেরো বছরের বালিকাকে মহালক্ষ্মী, চৌদ্দ বছরের বালিকাকে পীঠনায়িকা, পনেরো বছরের বালিকাকে ক্ষেত্রজ্ঞা ও ষোলো বছরের বালিকাকে অম্বিকা নামে পুজো করা হয়।

অষ্টমী তিথিতে ভোরে আরাধ্য কুমারীকে গঙ্গাজলে স্নান করিয়ে পরানো হয় লাল বেনারসী শাড়ি। সেই কন্যার পা ধুইয়ে পায়ে আলতা পরানো হয়। তার কপালে তিলক দিয়ে ফুল দিয়ে সাজিয়ে দুর্গা প্রতিমার সামনে সুসজ্জিত সিংহাসনে বসিয়ে হাতে দেওয়া হয় মায়ের ফুল। শুরু হয় পুরোহিতদের উদাত্ত কন্ঠে মন্ত্র উচ্চারণ। সাধারণ কুমারী হয়ে ওঠে সাক্ষাৎ দেবী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *