কলেজছাত্রীর নকল করার ছবি তুলে ভাইরাল করলেন দুই অধ্যাপক, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তরুণী

সাথী প্রামানিক, পুরুলিয়া, ৯ জানুয়ারি: কলেজ পরীক্ষার্থীর নকল করার ছবি সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হল। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্ত অধ্যাপকদের শাস্তির দাবিতে সরব হল ডিএসও। বৃহষ্পতিবার, দুপুরে ঘটনাস্থল হুড়ার লালপুর কলেজের সামনে বিক্ষোভ দেখাল তারা। অভিযুক্ত অধ্যাপকদের পরীক্ষা কক্ষে মোবাইল ব্যবহার নিয়েই প্রশ্ন তুললেন সংগঠনের জেলা নেতৃত্ব।

পুরুলিয়া শহরের নিস্তারিণী কলেজের পরীক্ষার সেন্টার হয় হুড়ার লালপুরে মহাত্মা গান্ধী কলেজে। ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার পরীক্ষার চলাকালীন। ওই দিন নিস্তারিণী কলেজের ছাত্রীরা পরীক্ষা দিচ্ছিলেন লালপুরের মহাত্মা গান্ধী কলেজে। পরীক্ষা চলাকালীন প্রথম বর্ষের কলা বিভাগের এক ছাত্রী নকল করতে গিয়ে ওই অধ্যাপক রাহুল চক্রবর্তীর কাছে ধরা পড়ে যান। ওই ছাত্রীর খাতা কেড়ে টেবিলে রাখতেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উত্তেজিত অবস্থা ওই ছাত্রী তার পরীক্ষার দেওয়ার খাতা ছিঁড়ে দেয়। এই গোটা বিষয়টি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় রেকর্ড করেন অন্য অধ্যাপক। তাঁর নাম শুভজিত গঁরাই। তিনিও ওই কলেজের অধ্যাপক। দুই অধ্যাপকই ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন ভাবে অপমান করে চিত্কার করে নিস্তারিণী কলেজের নাম কর বদনাম করতে থাকেন।

এই কথোপকথন সহ পুরো রেকর্ডিংটাই একটি সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল করেন দুই অধ্যাপক। নিজের এই ছবি ভাইরালের খবর পেতেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন নিস্তারিণী কলেজের ওই ছাত্রী। শুধু ওই ছাত্রীই নয়, লোকলজ্জায় তার পরিবারও ভেঙে পড়ে। পুরুলিয়া মফস্বল থানা এলাকার গ্রামে ওই ছাত্রীর বাড়িতে একটা থমথমে পরিবেশ দেখা গিয়েছে।

অধ্যাপকদের এই কাণ্ডে ওই ছাত্রী মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছেন যে বৃহষ্পতিবার পরীক্ষা দিতে যাননি তিনি। এই ঘটনার জেরে এক প্রকার পড়াশোনা ছাড়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন ওই ছাত্রী। কাল ওই ছাত্রীর বাড়িতে যান নিস্তারিণী কলজের প্রাক্তন জিএস যশোদা মাহাতো সহ ডিএসও–র অন্যান্য সদস্যারা। তাঁরা গিয়ে ছাত্রী ও তাঁর পরিবারকে সান্ত্বনা জানান। একই সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

এদিকে মহাত্মা গান্ধী কলেজের অধ্যক্ষ শান্তি কুণ্ডু জানান, ‘ওই দিনের তোলা ভিডিও ছবি আমাদের ৫২ জনের একটি গ্রুপে দেওয়া হয়। সেখান থেকে কিভাবে বেরিয়ে গেল তা জানার চেষ্টা করছি।’ এদিকে দুই অধ্যাপকের বেআইনিভাবে মোবাইলে পরীক্ষা কক্ষের ছবি তোলা এবং তা সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল করার তীব্র প্রতিবাদ করেছে ডিএসও। অভিযুক্তদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়ে সংগঠনের জেলা সম্পাদক বিকাশ রঞ্জন কুমার বলেন, ‘ওই ছাত্রীর নকল করাকে সমর্থন কখনই করছি না। তবে, অধ্যাপকদ্বয়ের কীর্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পরিকল্পিত বলে মনে হয়েছে।’  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *