আমাদের ভারত, ব্যারাকপুর, ৬ অক্টোবর: বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা খুনের ঘটনায় এবার নাম জড়াল ব্যারাকপুর ও টিটাগড় পৌরসভার দুই পৌর প্রশাসকের। এদিকে মণীশ খুনে সিআইডির হাতে ধৃত ২ অভিযুক্তের ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে ব্যারাকপুর মহকুমা আদালত।
ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা খুনের ঘটনায় ধৃত খুররম খান ও গুলাম শেখকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিল ব্যারাকপুর মহকুমা আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে বিজেপি নেতা তথা ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতের প্রাক্তন আইনজীবী মনীশ শুক্লা হত্যা কান্ডের ঘটনায় সিআইডির হাতে ধৃত ২ অভিযুক্তকে ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতের এসিজেএম মহম্মদ রফিকের এজলাসে পেশ করে সিআইডি। ধৃত খুররম খান ও গুলাম শেখকে সিআইডির তদন্তকারী অফিসাররা ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে রেখে তদন্ত করার আর্জি জানান বিচারকের কাছে। ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতের এসিজেএম বিচারক, সিআইডির সেই আবেদন মেনে নেয়। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে ২ অভিযুক্তকে ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতের এসিজেএম বিচারক মহম্মদ রফিকের এজলাস।
এদিকে এদিন মৃত মণীশ শুক্লার বাবা চন্দ্র মণি শুক্লা তার ছেলের খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে টিটাগড় পৌরসভার পৌর প্রশাসক প্রশান্ত চৌধুরী, ব্যারাকপুর পৌরসভার পৌর প্রশাসক উত্তম দাসের বিরুদ্ধে টিটাগড় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়াও এই খুনের ঘটনায় লিখিত অভিযোগে অভিযুক্ত হিসেবে আরো ২ তৃণমূল নেতার নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃত মণীশ শুক্লার বাবা চন্দ্র মণি শুক্লা। টিটাগড় পৌরসভার দুই বারের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর নাজির খান এবং ব্যারাকপুরের তৃণমূল নেতা রাজেন্দ্র যাদবের নামেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন চন্দ্র মণি বাবু। চন্দ্র মণি শুক্লা টিটাগড় থানায় লিখিত যে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তাতে মুখ্য অপরাধী হিসেবে টিটাগড় পৌরসভার পৌর প্রশাসক প্রশান্ত চৌধুরী ও ব্যারাকপুর পৌরসভার পৌর প্রশাসক উত্তম দাসের নাম রয়েছে। এই খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে টিটাগড় এলাকার পরিবহন ব্যবসায়ী বিপিটি ভোলার ও। অভিযোগ পত্রে নাম আছে খুররম খানেরও। তবে সিআইডি তদন্তভার হাতে নিয়ে খুররম খান ও গুলাম শেখকে গ্রেপ্তার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা শুরু করেছে।
মণীশ খুনে প্রথম অভিযুক্ত হিসেবে নাম জড়ানো টিটাগড় পৌরসভার পৌর প্রশাসক প্রশান্ত চৌধুরী বলেন,
“সিআইডি তদন্ত করছে, ওই তদন্তে পূর্ণ আস্থা আছে। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে আমাদের তৃণমূল নেতাদের নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি উত্তম এবং লালন পাসোয়ান এই ব্যারাকপুর টিটাগড় এলাকায় তৃণমূলের সংগঠনকে শক্তিশালী করছিলাম। সেই কারণে ওরা নিজেদের মধ্যে এই খুন করে আমাদের জেলে আটকে রাখতে চাইছে। আমরা ভেতরে থাকলে ওদের বাহুবলী রাজত্ব কায়েম করতে সুবিধা হবে। ওরা সিবিআই তদন্তের দাবি করেছে ভালো কথা। কিন্তু এর আগে সিবিআই এ রাজ্যে কোনও তদন্তের কিনারা করতে পারেনি। ওদের উপর আমাদের ভরসা নেই। নাজির খান আমাদের দলের নেতা। তাই ওর নামও জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”
ব্যারাকপুর পৌরসভার পৌর প্রশাসক উত্তম দাস বলেন, “আমাদের তৃণমূল নেতাদের নাম জড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। বর্তমানে আমরা তৃণমূলের সংগঠনকে শক্তিশালী করছিলাম। এখানে ৫০০ বিজেপি কর্মী মাত্র কিছুদিন আগেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছে। এটাতে বিজেপি ভয় পেয়ে যায়। ওদের অন্তর্কলহে খুন, আমাদের নাম জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে আমরা তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক কাজে বাধা পাই। আমি এই খুনের ঘটনার নিন্দা করে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। সিআইডি যাতে সত্য ঘটনা সামনে নিয়ে আসে।” মণীশ খুনের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পত্রে উত্তম দাস বা প্রশান্ত চৌধুরীর নাম থাকলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেনি। এদিন ব্যারাকপুর আদালতের কোনও আইনজীবী অভিযুক্তদের পক্ষে ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে মামলা লড়েননি।