তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জের, দল থেকে বহিষ্কৃত গঙ্গাজলঘাঁটির দুই নেতা

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৬ আগস্ট: গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লক ২ এর দুই তৃণমূল নেতা। আজ গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লক ২ এর সভাপতি নিমাই মাজি সাংবাদিক সম্মেলন করে একথা জানান।

গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লক ২ এর সহ সভাপতি জীতেন গরাই ও লটিয়াবনী অঞ্চল সভাপতি তথা বর্তমান পঞ্চায়েত বোর্ডের প্রধান মানিক মন্ডলকে তাদের দলীয় পদ থেকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি তাদের দল থেকেও অনির্দিষ্ট কালের জন্য বহিস্কার করা হল জানিয়ে ব্লক সভাপতি নিমাই মাজি বলেন, এই দু’জন পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর বোর্ড গঠনের সময় দলের নির্দেশ অমান্য করে দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে সিপিআইএম প্রার্থীর সাহায্য নিয়ে প্রধান পদে নিজেদের মনোমত লোককে বসিয়েছেন। অঞ্চল সভাপতি মানিক মন্ডল নিজেই প্রধান পদে ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটাভুটিতে অংশ নেন এবং সিপিআইএম প্রার্থীর সাহায্য নিয়ে জয়ী হয়ে প্রধান হন। সিপিআইএমের সাহায্য নিয়ে বিরুদ্ধ গোষ্ঠী বোর্ড গঠন করার পরও তো বোর্ড তৃণমূলের হাতছাড়া হয়নি, এই প্রশ্নের জবাবে নিমাই মাজি বলেন, ওরা দলের নির্দেশ অমান্য করে বোর্ড গঠনে গদ্দারি করেছে তাই জেলা নেতৃত্বকে জানিয়ে দল থেকে বহিষ্কার করা হল।

এবিষয়ে দলের ব্লক ২ এর সহ সভাপতি জীতেন গরাই বলেন, দল আমাকে কিছু জানায়নি। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের মুখ থেকেই শুনলাম ব্লক সভাপতি আমাকে দল এবং দলীয় পদ থেকে বহিস্কার করেছে। আমি এখনই এ ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া দিচ্ছি না। তবে জেলা নেতৃত্বের নির্দেশ এলে আপনাদের জানাব। পঞ্চায়েত প্রধান মানিক মন্ডলও বলেন, আমার এ বিষয়ে বলার কিছু নেই।

উল্লেখ্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনে গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লকের লটিয়াবনী গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৭ আসনের মধ্যে ১২ আসন পায় তৃণমূল। বিজেপির আসন ৩ এবং সিপিআইএম পায় ২টি আসন। ১১ আগস্ট বোর্ড গঠনের দিন তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিভাজন স্পষ্ট হয়ে যায়। শেষমেষ ভোটাভুটিতে যেতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা। তৃণমূলের অফিসিয়াল ক্যান্ডিডেট প্রধান পদে জয় মাজি ও উপপ্রধান পদে গৌরী মন্ডলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেন যথাক্রমে মানিক মন্ডল ও লক্ষ্মী রায়। ৩ জন বিজেপি ও ১ জন সিপিআইএম সদস্য ভোটাভুটিতে থেকে বিরত থাকেন। মানিক মন্ডল ৭-৬ এবং লক্ষ্মী রায় ৭-৫ ভোটে জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালে বাম আমলে তৃণমূলের মানিক মন্ডল প্রধান হন। এরপর মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় ২০১৩ ও ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর তিনি উপপ্রধান ছিলেন। পাশাপাশি বর্তমান উপপ্রধান লক্ষ্মী রায় ২০১৩ থেকে ২০১৮ পঞ্চায়েত প্রধান ও ২০১৮ সালেও সদস্য ছিলেন। এছাড়াও মানিক মন্ডল গত ১০ বছর যাবৎ এই অঞ্চলের সভাপতির দায়িত্ব সামলে আসছেন। ফলে মানিক ও লক্ষ্মী দুজনেরই পঞ্চায়েত প্রশাসন চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে।

নিমাই মাজির বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর দাবি, তিনি অঞ্চল সভাপতি এমনকি দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা না করেই নিজস্ব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইছে। তারই ফল হিসাবে দলের জয়ী প্রার্থীরাই মানিক মন্ডলকে প্রধান নির্বাচন করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *