বিশ্ব হাতি দিবসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জোড়া হাতির মৃত্যু বক্সায়, দেড় মাসে মারা গেল ৭

আলিপুরদুয়ার, আমাদের ভারত, ১২ আগস্ট: বিশ্ব হাতি দিবসে একটি মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষি থাকল উত্তরের জঙ্গল। বক্সার জঙ্গলে একসাথে একজোড়া বুনো হাতি বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেল। এদিনের মৃত্যু দুটি ধরলে গত দুই মাসে শুধুমাত্র আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন জঙ্গলে ৭টি হাতির মৃত্যু হল। যার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনা সামনে এসেছে।

মঙ্গলবার মাঝরাতের পর জোড়া হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে আলিপুরদুয়ারের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের হ্যামিলটনগঞ্জ রেঞ্জের ভুতরি-১ নম্বর কম্পার্টমেন্টে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে মৃত হাতি দুটিকে দেখতে পেয়ে বনকর্মীদের খবর দেন। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছায় বনকর্মীদের একটি দল। বনদফতর সূত্রে জানাগেছে, মৃত দুটি মাদি বুনো হাতির একটির বয়স আনুমানিক ১০-১২বছর। অন্যটির বয়স ৩ বছরের কাছাকাছি। যেভাবে দুটি মৃত হাতি জঙ্গলের মধ্যে পড়েছিল তাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের বিষয়ে নিশ্চিত হন বনকর্মীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বক্সার ফিল্ড ডিরেকটর শুভঙ্কর সেনগুপ্ত। প্রাথমিক তদন্তেই পরিস্কার হয় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে হাতি দুটির। এমনকি ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে শুভঙ্কর সেনগুপ্ত নিজেও বিদ্যুৎস্পৃষ্টের বিষয় অনুভব করেন। দুপুরের মধ্যেই দুটি হাতির দেহের ময়নাতদন্ত সম্পূর্ণ হয়।

শুভঙ্কর সেনগুপ্ত জানান, “একটি বিদ্যুৎ খুঁটি ও সংলগ্ন বড় এলাকা শর্টসার্কিট হয়েছিল। এলাকা পার করতে গিয়ে মৃত্যু হয় বুনো হাতি দুটির। বিদ্যুৎ দফতর সতর্ক হলে এমন ঘটনা নিশ্চিত রোখা যেত। আমরা বিদ্যুৎ দপ্তরের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছি কালচিনি থানায়।”
জানা গেছে, সারাবছরই এই এলাকা দিয়ে বুনো হাতি জঙ্গল পারাপার করে। এদিনও বুনো হাতির একটি বড়সড় দল ছিল ভুতরির জঙ্গলে। রাতে এক জঙ্গল থেকে অন্য অঙ্গলে যাবার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে।

বিশেষজ্ঞমহলের একাংশ বলেন, বিদ্যুৎ দপ্তরকে অবিলম্বে নিজেদের ভাবনা বদল করতে হবে। স্পর্শকাতর জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন এলাকায় হয় মাটির নীচ দিয়ে বিদ্যুতের তার নিয়ে যাওয়া হোক, নয়তো উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের তার বিশেষভাবে পেঁচিয়ে রাখা হোক। প্রতিটি স্থানে ঘন ঘন নজরদারির টিম রাখুক বিদ্যুৎ দপ্তর। না হলে বিদ্যুৎ দপ্তরের অসতর্কতাবশত এমন ঘটনা আরও ঘটবে।

আবার প্রকৃতিপ্রেমীদের একটি অংশের এই দাবি সামনে এসেছে, যে জাতীয় উদ্যানের ভেতর থেকে বিদ্যুতের তার সরিয়ে দেওয়া হোক। তাদের দাবি, মনে রাখতে হবে উত্তরবঙ্গ সহ গোটা বিশ্বে হাতির সংখ্যা সীমিত। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে হাতিদের অস্তিত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *