জয় লাহা, দুর্গাপুর, ৯ নভেম্বর: ফের পাচারের আগে মাদক-সহ পুলিশের জালে ধরা পড়ল দুই বামাল। উদ্ধার হল কয়েক লক্ষ টাকার ব্রাউন সুগার। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে, অন্ডালের হরিপুর-উখড়া রোডের ডায়মন্ড মোড়ে। পাচারে ব্যাবহৃত চারচাকা গাড়িটি আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, ধৃত দুই মাদক পাচারকারীর নাম রাজীব সাউ ও আস্তিক বোস রানীগঞ্জের বিএন মালিয়া রোডের বাসিন্দা।
অন্যান্য দিনের মতো মঙ্গলবার রাতে হরিপুর- উখড়া রোডের ডায়মন্ড মোড়ে নাকা চেকিং করছিল অন্ডাল থানার বনবহাল ফাঁড়ির পুলিশ। ওই সময় একটি মাহিন্দ্রা এসইউভি গাড়ি দেখে সন্দেহ হয় নাকা চেকিংয়ে কর্মরত পুলিশ কর্মীদের। তল্লাশি চালাতেই গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ১৬.২৩ গ্রাম ব্রাউন সুগার। তারপর তাদের গ্রেফতার করে। বাজেয়াপ্ত করা হয় তাদের গাড়িটিও। দুজনের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য পাচারের অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। বুধবার ধৃতদের আসানসোল আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জামিন খারিজ করে দেন। পুলিশ জানিয়েছে, “কোথায় কিভাবে ওই মাদক পেয়েছে, কোথায় পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিল সেটা জানার জন্য আদালতে ধৃতদের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।”
খনি অঞ্চলে অবৈধভাবে মাদক পাচার নতুন কিছু নয়। দুর্গাপুজোর আগে থেকে খনি অঞ্চলে আরও সক্রিয় মাদক পাচারকারীরা।
গত ২৭ সেপ্টম্বর লক্ষাধিক টাকার ব্রাউন সুগার সহ অন্ডালের কাজোড়া লছিপুর এলাকায় দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে প্রায় ২৩ গ্রাম ব্রাউন সুগার উদ্ধার করেছে। ধৃতদের নাম, নিতীশ কুমার সাউ (গুলু) ও আকাশ ভুঁইঞা। দুজনেই কাজোড়ার লছিপুর কলোনীর বাসিন্দা। ২০২১ সালের জুলাই মাসে পানাগড় -মোরগ্রাম সড়কের ওপর কাঁকসার হাসপাতালমোড় সংলগ্ন আন্ডারপাশে মাদক সহ পুলিশ ও এসটিএফের জালে ধরা পড়ে দুজন। ধৃতদের সঞ্জিব ভক্ত নদিয়ার পলাশিপাড়ার বাসিন্দা, আর একজন বিধান বৈদ্য বাঁকুড়ার সোনামুখির ডিহিপাড়ার বাসিন্দা। তাদের কাছে প্রায় ৯৭০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়, যার বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকার ওপর। এছাড়াও ১০২০ গ্রাম অ্যালপ্রাজোলাম উদ্ধার হয়েছে। এই নেশার ঔষধটি মূলত ঘুমের জন্য ব্যবহৃত হয়।
২০২১ সালের ডিসেম্বরের গোড়াতে কাঁকসার বনকাটির ১১ মাইল এলাকা থেকে প্রশান্ত রায় নামে এক মাদক পাচারকারী ধরা পড়ে। তার কাছ থেকে ২৬০ গ্রাম ব্রাউন সুগার উদ্ধার হয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। তার আগে ওই বছরই গত ৫ নভেম্বর দুর্গাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মনিরুল শেখ নামে এক যুবককে প্রায় কোটি টাকার হেরোইন সহ গ্রেফতার করে পুলিশ। নদিয়ার পলাশিপাড়া থানা এলাকার বাসিন্দা মনিরুল শেখ উত্তরপ্রদেশ থেকে এই মাদক পাচারের উদেশ্য নিয়ে দুর্গাপুর স্টেশনে নেমেছিল। দুর্গাপুর স্টেশনে নামার পর সেখান থেকে স্টেশন বাস স্ট্যান্ডের পিছনের রাস্তা ধরে বাইরে বেরিয়ে আসছিল। ওই সময় পুলিশ সন্দেহজনক ভাবে তাকে আটক করে। তার কথায় অসঙ্গতি থাকায় পুলিশের সন্দেহ হয়। তল্লাশি করতেই তার কাছ থেকে প্রায় ৫০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার হয়। তারপরই পুলিশ মনিরুলকে গ্রেফতার করে।
এছাড়াও ২০১৮ সালের আগষ্ট মাসে ২৮০ গ্রাম হেরোইন ও আগ্নেয়াস্ত্র সহ তিনজন সুপারিকিলার ধরা পড়ে দুর্গাপুরের বেনাচিতির উত্তরপল্লী এলাকায়। মাস কয়েক আগে ওড়িশা থেকে এরাজ্যে পাচারের আগে কোকওভেন থানার শ্যামপুর মোড় এলাকায় কয়েক লক্ষ টাকার গাঁজা সহ ধরা পড়ে পাচারকারীরা। তারপর পুজোর আগে এদিনের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই শোরগোল পড়েছে শিল্পাঞ্চলজুড়ে। প্রশ্ন এখানেই, একের পর এক ঘটনায় মাদকপাচারকারীদের কি স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে শিল্পাঞ্চল? যদিও পুলিশ জানিয়েছে, “ধৃতদের আদালতে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”