আমাদের ভারত, ৫ সেপ্টেম্বর: বহুবারই ধমক এবং চমক দেওয়ার চেষ্টা করলেন কিন্তু কোনো কাজই শেষ পর্যন্ত হলো না, বরং ভারতকে চাপ দিতে গিয়ে নিজের দেশে সমালোচনার মুখে পড়লেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি।
ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্কো চাপানোর পরেও রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে ভারত। রিপোর্ট বলছে ট্রাম্পকে সাইডে রেখে বিশ্ববাজারে বাজিমাত করছেন পুতিন- মোদী।
ইউক্রেন- রাশিয়ার যুদ্ধ এখনও বন্ধ করতে পারেনি আমেরিকা। ক্ষমতায় এসেই যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে তা করতে পারেননি ট্রাম্প। রাশিয়ার অর্থনীতির ক্ষতি করতে গিয়ে ভারতকে চাপে রাখতে চাইছিল আমেরিকা। আর তাই ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কো চাপিয়ে ছিল। সব মিলিয়ে এই শুল্ক এখন ৫০ শতাংশ। আমেরিকা চেয়েছিল রাশিয়ার অর্থনীতি ধ্বংস করতে, ভারত যেন তেল কেনা বন্ধ করে।
কিন্তু ট্রাম্পের হুমকিতে দমে যায়নি ভারত, বরং রাশিয়া থেকে তেল কিনে চলেছে কেন্দ্র সরকার। সেটা বিশ্ব বাজারে বিক্রি করছে ভারতের তেল কোম্পানিগুলি। আগস্টের হিসেব ভারতের ডিজেল রপ্তানি ১৩৭ শতাংশ বেড়েছে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার তেল কেনার নিষেধাজ্ঞা জারি করায়, ২৬ সালের পর থেকে এই কাজ আর করতে পারবে না রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির মতো ভারতের বড় কোম্পানিগুলি।
ইউরোপে ভারতের তেল রপ্তানি ৭৩ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্ব বাজারে তেল রপ্তানির পরিসংখ্যান বলছে কেবল ইউরোপের মধ্যে আগস্টে ভারতের ডিজেল রপ্তানি মাসিক ভিত্তিতে ৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী রিয়েল টাইম ডেটা বিশ্লেষণকারী সংস্থা কেবলার জানিয়েছে, বার্ষিক ভিত্তিতে ইউরোপে ভারতের তেল রপ্তানির পরিমাণ ১২৪ শতাংশের বিশাল বৃদ্ধি লাভ করেছে। একই সময় আরেকটি এনার্জি ট্র্যাকার ভোর্টেক্সা বলেছে আগস্ট মাসে ইউরোপে ভারতের ডিজেল রপ্তানি ছিল প্রতিদিন ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৩১৬ ব্যারেল। বার্ষিক ভিত্তিতে সেটা ১৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জুলাইয়েই এটি ৩৬ শতাংশ বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল কেনার সুবিধা পেয়েছে বলেই ইউরোপীয় বাজার দখল করে রয়েছে।
রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনার কারণে বিশ্ব মঞ্চে ভারতকে সমালোচনার মুখে ফেলতে চেয়েছে আমেরিকা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা বারবার অভিযোগ করেছেন ভারত রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনে প্রক্রিয়াজাত করে পশ্চিমের দেশগুলোতে বিক্রি করছে। যার ফলে বিপুল মুনাফা লাভ করছে ভারতের তেল কোম্পানিগুলি। রাশিয়া থেকে তেল কেনার মাধ্যমে আসলে ভারত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মস্কোকে আর্থিক সাহায্য করছে।
কিন্তু ভারত এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, পশ্চিমের দেশগুলির যদি ভারত থেকে তেল কিনতে কোনো আপত্তি থাকে তবে তারা চুক্তি-বন্ধ করতেই পারে।
অন্যদিকে ট্রাম্পের পোস্ট ঘিরেও হতাশার ছবি উঠে এসেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ভারত রাশিয়াকে চিনের কাছে হারিয়ে ফেললাম। ট্রাম্প যখন ভারতের ওপর শুল্ক চাপিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে তখন তার পাশে দাঁড়িয়েছে চিন ও রাশিয়া। সম্প্রতি সাংহাই সামিটে প্রধানমন্ত্রী মোদী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে একসাথে দেখা গেছে। তিন রাষ্ট্র নেতার বৈঠক ঘিরে আলোচনা শুরু হয়েছে গোটা বিশ্বে। আলোচনা হচ্ছে আমেরিকাকে এক ঘরে করতে কি এই ত্রিশক্তি তৈরি হচ্ছে?