আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ৮ ডিসেম্বর: সংবাদ মাধ্যমের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে অবাধ প্রবেশ শাসক দলের নেতা- নেত্রী, মন্ত্রী থেকে বিধায়কদের। সুরক্ষার বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অবাধে প্রসূতি বিভাগে ঢুকে তোলা হচ্ছে ছবি। এমনকি স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সামনেই অবাধে চলছে ভিডিওগ্রাফি। প্রসূতির সংক্রমণের আশঙ্কা থাকলেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।
বিজেপির অভিযোগ, শাসক দলের নেতা- নেত্রীদের আইন কানুন মানতে হয় না। উল্লেখ্য, দিল্লি পুলিশ বাংলাদেশী সন্দেহে মাস ছয়েক আগে তিন নাবালক সহ ছয় জনকে বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করেছিল। দীর্ঘ আইনি জটিলতা কাটিয়ে মানবিকতার খাতিরে বাংলাদেশের আদালত অন্তঃসত্ত্বা সোনালী খাতুন ও তার নাবালক ছেলেকে ভারতে ফেরার অনুমতি দেয়। সেই মতো শুক্রবার মালদার মহদিপুর বর্ডার দিয়ে তাদের দেশে ফেরানো হয়। শনিবার দুপুরে মালদা থেকে আম্বুলেন্সে বীরভূমের পাইকরের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। ওইদিনই অন্তঃসত্ত্বা সোনালীকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করা হয়। সঙ্গে তাঁর নাবালক ছেলে। স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী প্রসূতি বিভাগে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্তু সোনালীকে দেখতে শাসক দলের নেতা- নেত্রীদের ভিড় উপচে পড়ছে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে।

প্রথমে যান বিধানসভার ডেপুটি স্পিকারর আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে একাধিক তৃণমূল নেতা- কর্মী স্বাস্থ্যবিধিকে উপেক্ষা করে অবাধে মোবাইল ক্যামেরা নিয়ে সেখানে প্রবেশ করেন। সঙ্গে ছিলেন হাসপাতালের এমএসভিপি পলাশ দাস। এরপরেই হাসপাতালে যান লাভপুরের বিধায়ক রানা সিং, তৃণমূলের বীরভূম জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক অনুব্রত মণ্ডল সহ ছোট বড় মাপের নেতা- নেত্রীরা। প্রত্যেকে ভিডিও এবং স্টিল ছবি তুলে সেখানকার ছবি সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করছেন। যত বাধা সংবাদ মাধ্যমকে। পুলিশ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিস্কার জানিয়ে দিচ্ছে, সংবাদ মাধ্যমের প্রবেশ নিষিদ্ধ, তবে তৃণমূল করলে ছাড়।
এনিয়ে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শান্তনু মণ্ডল। তিনি বলেন, “সোনালী খাতুনকে নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা দুঃখজনক। ভারত সরকার তাকে দেশে ফিরিয়েছে। হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তাকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। ওই বিভাগে প্রবেশের কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু সমাজ মাধ্যমে ছবি দেখে বুঝতে পারছি শাসক দলের নেতা- নেত্রীদের সেখানে অবাধ প্রবেশের ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ওই বিভাগের সুরক্ষা এবং সংক্রামণ বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে আমরা মনে করছি। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সেখানে অবাধ প্রবেশের ফলে রোগীরা সংক্রামিত হতে পারেন। তাছাড়া প্রসূতি বিভাগে অবাধ ছবি তোলায় মায়েদের সম্ভ্রম বে-আব্রু হয়ে পড়ছে। এরজন্য দায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং কর্তব্যরত পুলিশ অফিসাররা। অবিলম্বে এই প্রবণতা বন্ধ না হলে আমরা আন্দোলনে নামব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।”
অনিয়মের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন এমএসভিপি পলাশ দাস। তিনি বলেন, “অন্যায় হচ্ছে। এভাবে প্রসূতি বিভাগে অবাধ প্রবেশ করা যায় না। ওই বিভাগে মায়েদের সুরক্ষা এবং সম্ভ্রম দুটোই সুরক্ষিত রাখা উচিত। আমরা আরও সতর্ক হব।”

