সুশান্ত ঘোষ, আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগণা, ৬ জানুয়ারি: সন্দেশখালির পর বনগাঁতেও ইডিকে দেখে মারমুখী হয়ে উঠেছিলেন শঙ্কর আঢ্যর অনুগামীরা। রেশন ‘দুর্নীতি’ কাণ্ডে প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যকে সেখান থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা। ভাঙ্গচুর চালানো হয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের একটি গাড়ি। সামরিক বাহিনীদের লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইট, পাথর। এই ঘটনায় কেউ আহত না হলেও তদন্তকারীরদের একটি গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে দেওয়া হয়।
রেশন দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের বর্তমান বনমন্ত্রী তথা রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। আর তারই জেরে ইডি বিভিন্ন সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে। আর সেভাবেই শুক্রবার সাতসকালে বনগাঁ সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় হানা দেয় ইডি। এদিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ইডির একাধিক দল একযোগে বনগাঁর শিমুলতলা এলাকায় শঙ্কর আঢ্যর বাড়ি এবং তার শ্বশুরবাড়িতে তল্লাশি অভিযানে নামে। পাশাপাশি, তার ভাই মলয় আঢ্যর আইসক্রিম কল, ব্যবসার কাজে যুক্ত দুই কর্মীর বাড়ি এবং কলকাতাতেও ঘনিষ্টদের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চলে।

সারাদিন জিজ্ঞাসাবাদ, তল্লাশি অভিযান এবং নথি খতিয়ে দেখার পর রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ শঙ্কর আঢ্যর শ্বশুরবাড়ি থেকে নগদ সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করে ইডি। এরপর আরও একটি দল শঙ্কর আঢ্যর বাড়িতে হাজির হয়। সেখানেও সারা দিনরাত তদন্তের কাজ চলে। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ হঠাৎই কলকাতা থেকে শঙ্কর আঢ্যর বাড়িতে হাজির হন ইডির একজন আধিকারিক। শঙ্কর আঢ্যর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্যর বক্তব্য অনুযায়ী, ওই অফিসার এসে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের একটি কাগজ দেখিয়ে বলেন, জ্যোতিপ্রিয়র বওয়ানে তাঁর স্বামীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
জ্যোৎস্না আঢ্যর আরও বক্তব্য, ‘এদিন সকাল থেকে সারাদিন এবং রাত পর্যন্ত ইডির অফিসাররা ব্যবসা সংক্রান্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখছিলেন। আমরাও সেভাবে সহযোগিতা করছিলাম। কিন্তু গভীর রাতে হঠাৎ করেই ইডির ওই অফিসার হাজির হয়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের একটি কাগজ দেখিয়ে আমার স্বামীকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল।
শুক্রবার দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে শঙ্করকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বনগাঁয় তাঁর বাড়ির সামনে থেকে যখন শঙ্করকে গাড়িতে তোলা হচ্ছিল, আশপাশে অনেকে জড়ো হন। মহিলারাও ছিলেন সেই দলে। তাঁরা ইডির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ইডির তরফে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা বিক্ষোভকারীদের আটকাতে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যান। রাস্তা ফাঁকা করার পরেই এগোয় শঙ্করের গাড়ি। ইডিকে বাধা দিতে সামনে এগিয়ে এসেছিলেন এলাকার মহিলারা। শঙ্করকে গাড়িতে তোলার সময় একটা ইট গিয়ে পড়ে ইডির গাড়িতে। সেই আক্রমণে ইডির গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে যায়। এরপর ইডির গাড়ি লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীদের লক্ষ্য করে কটু কথাও ছোড়া হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কেন্দ্রীয় বাহিনী লাঠি উঁচিয়ে ছত্রভঙ্গ করে। তবে সন্দেশখালি এবং বনগাঁয় তদন্তকারীদের বাধা দেওয়ার প্রক্রিয়া ছিল একই।
কিছু সময় ধরে এই বিক্ষোভ চলার মধ্যেই শঙ্কর আঢ্যকে গাড়িতে তুলে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান ইডির আধিকারিকরা। রাতে তাকে সিজিও কমপ্লেক্সে রাখা হয় বলে ইডি সূত্রের খবর। শনিবার তার মেডিকেল টেষ্ট করার পর তাকে আদালতে তোলা হবে বলে জানাগেছে। ইডি সূত্রে খবর, এই গোটা ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হবে। তারই তোড়জোড় চলছে। যদিও বনগাঁয় কোনও ইডি আধিকারিকের আঘাত লাগেনি। তবে সন্দেশখালির মতো ঘটনা ঘটতে পারত সেখানেও। সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল শুক্রবার রাতে।

