TMC, Rampurhat, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা

আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, বীরভূম, ২৯ অক্টোবর: বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী। সে সব কথা গোপন রেখেই বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক তরুণীর সঙ্গে দিনের পর দিন সহবাসের অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে সহবাসের ফলে গর্ভবতী হয়ে এক সন্তানের জন্ম দেন জেদি তরুণী। বর্তমানে তৃণমূল নেতার কথার অবাধ্য হওয়ায় তরুণীকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে পরিবার এবং নিজের প্রাণ বাঁচাতে পুলিশের দ্বারস্থ হন তরুণী। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার নাম প্রিয়নাথ সাউ ওরফে টিঙ্কু। তিনি রামপুরহাট পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দুবারের কাউন্সিলর। সেই সঙ্গে তিনি সদ্য মনোনীত রামপুরহাট শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি।

জানা গিয়েছে, রামপুরহাট পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই তরুণী ২০১৫ সালে ভোটার কার্ড সংক্রান্ত বিষয়ে অফিসে গিয়ে কাউন্সিলর প্রিয়নাথ সাউয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপরেই তাকে ভোটার কার্ড তৈরিতে সাহায্যের নামে একাধিকবার বিভিন্ন জায়গায় ডেকে পাঠায় বলে অভিযোগ তরুণীর। একাধিকবার যাতায়াতের সুযোগে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তরুণীর অভিযোগ, প্রিয়নাথ সাউ তার বাড়িতে গিয়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। এমনকি সেই বিয়েতে তরুণীর মা- বাবা সম্মতি জানায়। সেই সময় প্রিয়নাথ জানিয়েছিলেন, তিনি অবিবাহিত। এইভাবে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিনের পর দিন তরুণীর সঙ্গে সহবাস করেন ওই কাউন্সিলর। বছর পাঁচেক পর বিয়ের প্রস্তাব দিলে অভিযুক্ত প্রিয়নাথ সাউ বিয়েতে অস্বীকার করে। তখন সে জানায় তার স্ত্রী ও পুত্র রয়েছে। তারপর তরুণী কাউন্সিলরের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দিলে প্রিয়নাথ নিজেকে প্রভাবশালী নেতা হিসাবে পরিচয় দিয়ে পরিবারকে খুনের হুমকি দিয়ে সহবাস চালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে তরুণীর পরিবার মেয়ের অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। কিন্তু তারপরও ওই কাউন্সিলর তরুণীর পিছু ছাড়েনি বলে অভিযোগ। এবার তরুণীর সদ্য বিবাহিত স্বামীকে তাদের সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সহবাস করে বলে অভিযোগ। ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর তরুণী পুত্র সন্তানেরর জন্ম দেন। সন্তান প্রসব হতেই তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে শুরু করেন পরিবার থেকে বিয়ে দেওয়া স্বামী। বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। তারপরও কাউন্সিলর প্রিয়নাথ সাউ তার সঙ্গে সহবাস করে চলেছেন। এবারও প্রভাব খাটিয়ে খুনের হুমকিতে মুখ বন্ধ করে কাউন্সিলরের কথা মতো সহবাসে রাজি হন তরুণী। কিন্তু দিনের পর দিন তার অত্যাচারের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় বুধবার সকালে রামপুরহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী।

শাসক দলের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ধর্ষন সহ একাধিক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, “তৃণমূল ধর্ষকদের সম্মান দেয়। যেদিন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ জমা পড়ছে সেই সময় তাঁকে উত্তরীয় দিয়ে বরণ করছেন ডেপুটি স্পিকার। তাছাড়া ওই অভিযুক্তর সমস্ত কার্যকলাপ জেনেই তৃণমূলের কলকাতার নেতারা তাকে রামপুরহাট শহর সহ সভাপতি নির্বাচিত করেছে। আমরা এই ঘটনার নিন্দা করছি। সেই সঙ্গে অভিযুক্তকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। গ্রেফতার করা না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব”।

সিপিএমের বীরভূম জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব মল্লিক বলেন, “দুর্নীতির টাকার পাহাড় হলে এমনটা হয়। আর এখন তৃণমূল মানেই দুর্নীতিবাজ, তোলাবাজ আর চরিত্রহীন। আমরা দেখব বিষয়টি যেন পুলিশ ধামাচাপা দিতে না পারে। এদিন বিকেলে অভিযুক্ত কাউন্সিলরকে গ্রেফতারের দাবিতে থানায় স্মারকলিপি জমা দেয় সিপিএম। সেই সঙ্গে তরুণীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।

বিষয়টি জানা নেই বলে এড়িয়ে যান রাজ্যের ডেপুটি স্পিকার তথা রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযুক্ত প্রিয়নাথ সাউ দিনভর নিজেকে দলীয় কার্যালয়ের মধ্যে বন্দি রাখায় তার বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।

এদিকে রামপুরহাট থানা সূত্রে জানা গিয়েছে তরুনীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রামপুরহাট থানার পুলিশ। তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য তাকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *