কেশপুরের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে জেরবার তৃণমূল

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ ডিসেম্বর: কেশপুর ব্লক তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে জেরবার জেলা ও রাজ্য নেতারা। রবিবার বিকেলে কোন্দল মেটাতে ম্যারাথন বৈঠকে বসেন। মেদিনীপুর শহরে জেলা পরিষদ হলে এই বৈঠক ঘিরে চরম উত্তেজনা ছড়ায়। কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন বাইরে থাকা তৃণমূল কর্মীরা। এই নিয়ে চরম উত্তেজনা ছড়ায়। সামাল দিতে ছুটে আসতে হয় বিশাল পুলিশ বাহিনীকে। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে বিকেলে বৈঠক শুরু হয়। রাত নটা পর্যন্ত চলে বৈঠক।

গত এক মাস ধরে কেশপুর ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। শনিবার থেকে কেশপুর ব্লক তৃণমূল কার্যালয়কেই তৃণমূলের দুই পক্ষ দু’রকমভাবে শেকল দিয়ে তালা মেরে দেয়। দুই পক্ষই নিজেদের স্থান দখলে তৎপর। মূলত কেশপুর ব্লকের ১৫ টি অঞ্চলের মধ্যে ৮-১০-১২-১৩ নম্বর অঞ্চলের ব্লক সভাপতি নির্বাচন নিয়েই এই গন্ডগোল ছিল।

রবিবার বিকেল সাড়ে চারটা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পরিষদ হলে কেশপুর ব্লকের নেতাকর্মী, বিধায়ক শিউলি সাহা, ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি আশীষ হুদাইত’কে নিয়ে বৈঠকে বসেন তৃণমূলের জেলা কোঅর্ডিনেটর অজিত মাইতি। বৈঠক চলাকালীনই বাইরে উপস্থিত কেশপুর থেকে আসা বহু তৃণমূল কর্মী শিউলি সাহার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করে। শিউলি সাহা কেশপুরে চলবে না বলে স্লোগান দিতে থাকে তারা। এতটাই উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল যে সামাল দিতে কোতোয়ালি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনীকে ছুটে আসতে হয়।


ছবি: জেলা পরিষদ ভবন।

রাত নটা নাগাদ বৈঠকের পর অজিত মাইতি বলেন, “বড় কোনও সমস্যা ছিল না, নিজেদের ইগো সমস্যা নিয়েই এই সূত্রপাত। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে সিপিএম ও বিজেপি। সবাইকে বুঝিয়ে সহমতের ভিত্তিতে ১৫ একটি অঞ্চল তৃণমূল সভাপতির তালিকা সংস্কার করা হয়েছে। তবে সব থেকে বিতর্ক যে ১০ নম্বর অঞ্চলে ছিল সেখানে সভাপতিকে সরিয়ে দিয়ে যুগ্ম কনভেনার করা হয়েছে। সমস্যা মিটিয়ে খুব শীঘ্রই ঐক্যবদ্ধ বৃহৎ মিছিল কেশপুরে করতে চলেছে তৃণমূল। সেই সঙ্গে বিজেপি ও সিপিএমের উস্কানি বিষয়ে সতর্ক করেছি। তবে এত বৈঠকের পরেও যদি পুনরায় কেশপুরে গন্ডগোল করার চেষ্টা হয় তাহলে দল শেষ সিদ্ধান্ত নেবে সেই কর্মীদের নিয়ে।”

বৈঠক চলাকালীন শিউলি সাহা বিরোধী যে স্লোগান দেওয়া হয়েছিল সেই প্রসঙ্গে অজিত মাইতি বলেন, “যারা এই বিরোধী স্লোগান দিয়েছে তাদের শোকজ করা হচ্ছে। শীঘ্রই স্থানীয় নেতৃত্ব তাদের নিয়ে বৈঠকে বসে জানতে চাইবে কেন এসব করেছে তারা।”

শিউলি সাহা বলেন, “সকলের কাছে আমি প্রিয় হতে পারি না। কি করা উচিত সেটা জেলা কো-অর্ডিনেটর জানিয়ে দিয়েছেন। তবে আমরা চাইবো দলের কেউ এমন কোনও কর্মকান্ড করবেন না যাতে বিরোধীদের হাত শক্ত হয়।”

অন্যদিকে এই ঘটনা নিয়ে বিজেপি জেলা শাসকের কাছে অন্য অভিযোগ করেছে রবিবার রাতেই। ছুটির দিনে সরকারি জেলা পরিষদে তৃণমূলের এই বৈঠক কেন হবে? সেই প্রশ্ন তুলে জেলা শাসকের কাছে মেইলে অভিযোগ করেছে বিজেপি। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি ড: শঙ্কর গুছাইত বলেন, “ছুটির দিনে সরকারি স্থান জেলা পরিষদের তৃণমূলের বৈঠক চলছে। সেখানে পাহারা দিচ্ছে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। সরকারি জেলা পরিষদকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছেন তৃণমূলের নেতারা। বিষয়টা জেলা শাসককে জানিয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছি আমরা।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *