পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: তৃণমূল কাউন্সিলরের দাদাগিরি! পৌরসভার ড্রেনের পাশে নিয়ম মেনে জায়গা না ছেড়ে টিনের সেড দিচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। তা বন্ধ করতে গিয়ে রীতিমতো তার উপর চড়াও হয়ে ওই ব্যক্তিকে মারধর ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠলো তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। সেই মারধরের ভিডিও ভাইরাল হতেই শোরগোল পড়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড গোবিন্দপুরে।
ওই এলাকায় নিজের রায়ত জায়গায় নার্সিংহোম তৈরির জন্য ভবন নির্মাণ করেছেন পার্থসারথী নাগ নামে এক ব্যক্তি। তাঁর অভিযোগ, তার নিজের রায়ত জায়গার উপর বাড়ি তৈরি হয়েছে। বাড়ির সামনে থাকা তার জায়গায় টিনের সেড দিচ্ছিলেন তিনি। আর এই সেড দেওয়াকে ঘিরেই গন্ডগোল।পার্থসারথী নাগের অভিযোগ, ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অভিজিৎ রায় আগেও একদিন এসে সেড দেওয়ার কাজ বন্ধ রেখে দেখা করার কথা বলে গিয়েছিলেন। সরকারি ড্রেনের ধারে জায়গা না ছেড়ে সেড কেন করা হচ্ছে এই নিয়ে ওই কাউন্সিলর এসে কাজ বন্ধ রেখে দেখা করার কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমি দেখা না করায় আজ আবার ওই কাউন্সিলর এসে কাজ বন্ধ করার কথা বলে। তিনি বলেন, পৌরসভা আমাকে নোটিশ করুক, আমি গিয়ে কথা বলবো। সমস্যা থাকলে মিটিয়ে নেবো। কিন্তু আজ হটাৎই বিনা নোটিশে কাউন্সিলর নিজে এসে রীতিমতো হুমকি দেন এবং তার ভাই সিদ্ধার্থ নাগের উপর চড়াও হয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে এবং চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেন। জায়গার মালিক পার্থসারথী নাগ জানান, আজ কাউন্সিলর এসে তার ভাই সিদ্ধার্থ নাগকে মারধর করে হুমকি দিয়ে যান।ঘটনায় অসুস্থ সিদ্ধার্থ নাগকে চিকিৎসার জন্য চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য।
জায়গার মালিক পার্থসারথী নাগ ও তার ভাই সিদ্ধার্থ নাগের দাবি, কাউন্সিলর অনৈতিক দাবি করেছিলেন, তা না মানায় ক্ষুব্ধ হয়ে গায়ের জোরে আজ কাজ বন্ধ করতে এসেছিলেন।তাদের দাবি, পৌরসভার যে ড্রেনটি করা হয়েছে তা আমাদেরই জায়গায়, আমরা কোনো আপত্তি করিনি। যে টিনের সেডটি করা হচ্ছে ড্রেন দখল বা বুজিয়ে নই। যদি বেআইনি কিছু করে থাকি তাহলে পৌরসভা অভিযোগ করে নোটিশ পাঠাতে পারতো। কিন্তু সেসব কিছু না করে কাউন্সিলর নিজে এসে রীতিমতো দাদাগিরি করে গেছেন এবং হুমকি দিয়ে গেছেন কাজ বন্ধ করার জন্য। ঘটনায় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হবে বলে জানিয়েছেন জায়গার মালিক পার্থসারথী নাগ ও তার ভাই সিদ্ধার্থ নাগ।
চন্দ্রকোনা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অভিজিৎ রায় চন্দ্রকোনা শহর যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পদেও রয়েছেন বলে জানাগেছে। শাসক দলের কাউন্সিলর ও যুব সভাপতির পদে থেকে এহেন আচরণের ভিডিও প্রকাশ্য আসতেই শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।
যদিও এবিষয়ে অভিযুক্ত কাউন্সিলর অভিজিৎ রায় জানিয়েছেন, “এলাকার মানুষের থেকে খবর পেয়ে আমি স্পটে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে বলি কাজটা বেআইনি হচ্ছে তুমি পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলে নিয়ম মেনে কাজটা করো। কিন্তু পরদিন আবার শুনি ওই ব্যক্তি গায়ের জোরে ড্রেন দখল করে টিন দিয়ে সেডের কাজ করছে।আমি এবং ওয়ার্ডের কিছু কর্মী সমর্থক গিয়ে কাজ বন্ধ করি এবং পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ারকে ডাকি তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই ব্যক্তিকে ইন্সট্রাকশন দেন ড্রেন থেকে তিন ফুট ছেড়ে সেড করার জন্য ওই ব্যক্তি ইঞ্জিনিয়ারকে জানান, সাত দিন সময় দেওয়ার জন্য নিয়ম মেনেই কাজ করবেন।কিন্তু আজ আবার খবর পাই জায়গার মালিক পার্থসারথী নাগ ও তার ভাই সিদ্ধার্থ নাগ দু’জনে দাঁড়িয়ে থেকে গায়ের জোরে নিয়ম না মেনেই একপ্রকার কাজটা সম্পন্ন করে ফেলেছে। আর সেই জন্যই আমি উত্তেজিত হয়ে পড়ি এবং চেঁচামেচিও করেছি এটা ঠিক, কিন্তু মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।” ওয়ার্ডে বেআইনি ভাবে টিনের সেড নির্মাণ হচ্ছে এবিষয়ে কাউন্সিলর কিছু জানাননি আর ওই ব্যক্তিও কিছু জানাননি।আমার কাছে লিখিত অভিযোগ এলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম, ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠিয়ে খতিয়েও দেখতাম। কিন্তু পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ কেউ করেনি, আর ইঞ্জিনিয়ার যে বিষয়টি জানে সেও এবিষয়ে কিছু বলেনি।একপ্রকার পৌরসভা বা চেয়ারম্যানকে অন্ধকারে রেখেই এসব করা হয়েছে তা চেয়ারম্যানের বক্তব্যে স্পষ্ট।
এখনপ্রশ্ন উঠছে, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ঘটনা জানা সত্বেও পৌরসভাকে না জানিয়ে বা নোটিশ না পাঠিয়ে জায়গার মালিককে ডাক করিয়ে সতর্ক না করে নিজে এমন হঠকারিতা দেখাতে গেলেন কেন? প্রশ্ন উঠছে পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ারের ভূমিকা নিয়েও।