Anubrata, TMC, আইসিকে অকথ্য ভাষায় আক্রমণ! অডিও ভাইরাল হতেই অস্বস্তিতে তৃণমূল, দলের চাপে ক্ষমা চাইলেন অনুব্রত

আমাদের ভারত, ৩০ মে: পুলিশকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের পোস্ট করা অডিও ভাইরাল হতেই তৃণমূল পড়ে যায় অস্বস্তিতে। দলের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয় মাথা নত করতে। উচ্চ নেতৃত্বের কথা মেনে দলের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই লিখিতভাবে ক্ষমা চাইলেন বীরভূমের দাপুটে নেতা তৃণমূলের কোর কমিটির অন্যতম সদস্য অনুব্রত মণ্ডল। একেবারে চিঠি লিখে দুঃখ প্রকাশ করেছেন অনুব্রত।

পুলিশের উর্দির সম্মান ভুলে গিয়ে অত্যন্ত কদর্য ভাষায় অপমান করেছেন অনুব্রত। ভাষা এতটাই খারাপ ছিল যে, সংবাদ মাধ্যমে তা প্রচার করতে বিপ ব্যবহার করতে হয়েছে। অডিও ক্লিপে নিজেকে অনুব্রত মণ্ডল বলে পরিচয় দিতেও শোনা গেছে তাকে। কদর্য ভাষায় হুমকি দিচ্ছেন বোলপুরের আইসিকে। ডেপুটেশন দিতে গিয়ে থানা থেকে বের করে আইসিকে পেটানোর হুমকি দিচ্ছেন। কোয়াটার থেকে চুলের মুঠি ধরে বের করা হবে বলেও হুমকি দিচ্ছেন। এই অডিও ক্লিপ পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য পুলিশের ডিজির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি লেখেন, রাজীব কুমার দ্রুত এই বিষয়ে তদন্ত করে রাজ্যবাসীর কাছে জবাবদিহি করুন। তৃণমূল নেতাদের কাছে পুলিশ সুরক্ষিত না হলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা। আর এই ভিডিও ভাইরাল হতেই হৈচৈ পড়ে যায়।

পুলিশ কর্তাকে হুমকির কাণ্ডে শেষ পর্যন্ত দলের চাপের মুখে ক্ষমা চান কেষ্ট। ক্ষমা প্রার্থনা করে তিনি লিখেছেন, সাম্প্রতিক ঘটনায় আমি দুঃখিত। দিদির পুলিশের কাছে আমি একবার কেন ১০০ বার ক্ষমা চাইতে পারি। কোনো পুলিশ বন্ধু আমাকে ভুল বুঝেলে আমি দুঃখিত ও ক্ষমা প্রার্থী।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে বীরভূমের তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়। বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। দু’জনের কথোপকথনের সেই অডিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন পোস্ট করে প্রশ্ন তোলেন, প্রশাসন কোথায়? শুক্রবার পুলিশ এই অডিওর ভিত্তিতে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তাকে নোটিশ পাঠিয়ে শনিবার থানায় তলব করা হয়। এরপর দুপুরে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাকে কড়া বার্তা পাঠায়। চার ঘন্টার মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শোকজ করা হতে পারে বলেও জানানো হয়।

এরপর আর সময় নষ্ট করেননি দর্দোন্ড প্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডল। একেবারে সঙ্গে সঙ্গে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছেন বীরভূমের কেষ্ট।

চিঠিতে তিনি লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাধারণ পুলিশ কর্মী থেকে একজন বড় অফিসার সবাই দিদির কাছের মানুষ। তাদের অপমান করার কথা ভাবতে পারি না। সাম্প্রতিক ঘটনায় আমি দুঃখিত। দিদির পুলিশের কাছে আমি একবার কেন ১০০ বার ক্ষমা চাইতে পারি। আসলে আমি নানারকম ওষুধ খাই এবং দিদির পুলিশের বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ করলে মাথা গরম হয়ে যায়। সত্যি আমি দুঃখিত, কিন্তু আপনাদের ভাবতে হবে তিনটি মহকুমা বোলপুর, সিউড়ি ও রামপুরহাটে বিশাল মানুষের মহা মিছিল দেখে কারা ভয় পেল? বিজেপি কীকরে আমার আর আমাদের বোলপুরের আইসিকে গালমন্দ করার ফুটেজ পেল? কে দিল? কোনো চক্রান্ত নেই তো?” এরপর তার বক্তব্য, “তবুও আমি বলছি, কোনো পুলিশ বন্ধু আমাকে ভুল বুঝলে আমি দুঃখিত, ক্ষমা প্রার্থী।”

প্রসঙ্গত, দলের নির্দেশে ক্ষমা চাইলেও তার বিরুদ্ধে পুলিশের নেওয়া পদক্ষেপকে কেষ্ট সহজে এড়াতে পারবেন? সেই প্রশ্ন এখন ঘুরছে রাজনৈতিক মহলে। পুলিশকে কদর্য ভাষায় আক্রমণের অভিযোগে বোলপুর থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। বোলপুরের দলীয় কার্যালয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। শনিবার তাকে থানায় হাজিরার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কী করবেন কেষ্ট? সেটাই এখন দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *