পানিহাটির দণ্ড মহোৎসবে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, গরমে মৃত ৩ অসুস্থ ৩৫ জন

আমাদের ভারত, ব্যারাকপুর, ১২ জুন: পানিহাটির দণ্ড মহোৎসবে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গেল। ঐতিহাসিক ঐতিহ্য পূণ্য এই দই চিঁড়ের মেলায় এসে তীব্র গরমের জেরে প্রাণ হারালেন চার পুণ্যার্থী, অসুস্থ হলেন বহু।

আজ ৫০৬ তম দন্ড মহোৎসব পালিত হচ্ছিল পানিহাটি গঙ্গার তীরবর্তী মহোৎসব তলা ঘাটে। এই দন্ড মহোৎসবে শুধু পানিহাটি নয় সারা জেলাসহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বৈষ্ণব ধর্মালম্বী ভক্তরা ভিড় জমান। পানিহাটির ঐতিহ্যবাহী দন্ড মহোৎসব চিঁড়ের মেলা বলেও পরিচিত, বৈষ্ণব সমাজে কেউবা আবার এই দন্ড মহোৎসব মেলাতে মালশা ভোগ হিসেবেও পালন করেন।

গত দুই বছর করোনার কারণে মেলা বন্ধ থাকার পর এই বছর আবার পানিহাটি পৌরসভার উদ্যোগে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সকাল থেকেই মেলায় পুণ্যার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। গরমের তোয়াক্কা না করেই পানিহাটির মহোৎসবের মেলায় ভক্তদের ঢল নেমেছিল। ভিড় ও গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই। প্রায় ৩৫ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। আরও মর্মান্তিক খবর হল, গরমের রেষ সহ্য করতে না পেরে ৪ জনের মৃত্যু হয়ে বলে সূত্রের খবর। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পাড়ে বলেই অনুমান। পানিহাটি মহোৎসব তলা ঘাটের পাশে অবস্থিত ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ৬৬ বছর বয়সী সুভাষ পাল তার স্ত্রী শুক্লা পাল আজ পুজো দিতে গিয়েছিলেন ওই মেলায়। সেই সময় গরমে ভিড়ের চাপে এই বৃদ্ধ দম্পতি অসুস্থ বোধ করেন। তাদের মত আরো অনেকেই এই গরমে লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান। অসুস্থ পুণ্যার্থীদের উদ্ধার করে স্থানীয় কামারহাটি সাগর দত্ত হাসপাতাল, বলরাম দত্ত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই অসুস্থ পুণ্যার্থীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে বৃদ্ধ সুভাষ পাল ও তার স্ত্রীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এরা ছাড়াও আরো ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। এরপর মেলায় ঢোকার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়, ফলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। আর গরমে অসুস্থতার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এরপর বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার মনোজ ভার্মা। তিনি এসে প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিক, বিধায়ক ও সাংসদদের সাথে কথা বলে এই মেলা ও মন্দির সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এবং মেলা সম্পূর্ণ খালি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

খবর শুনে ঘটনাস্থলে আসেন বন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, সাংসদ সৌগত রায়, বিধায়ক নির্মল ঘোষ। এদিন বনমন্ত্রী বলেন, “গত দুই বছর এই মেলা হয়নি, তাই এবার বড় করে বেশি মানুষ আসবে ভেবে তেমন করেই সব ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তাও এটা ঘটে গেলো। এই মর্মান্তিক ঘটনা থেকে আমরা আগামীর জন্য শিক্ষা নিলাম। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছেন। ১০ লক্ষ লোক হয়েছিল আজ আর তার সাথে গরম। তাই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল। আমরা নিহত ও অসুস্থ পুণ্যার্থীদের পরিবারের পাশে আছি।”

এদিন সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিষয়টি দেখছেন। এখনো পর্যন্ত ৩ জন এই ঘটনায় মারা গেছেন। আর এক জনের মৃত্যুর খবর সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। এদের ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আগামীকাল পৌরসভা থেকে এই চেক দেওয়া হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *