স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদীয়া, ৫ নভেম্বর: ঐতিহ্য, তন্ত্রসাধনা ও ভক্তির এক অনন্য সমন্বয় — নবদ্বীপের তেঘরী পাড়ার বড়শ্যামা মাতার পুজো এবছর পদার্পণ করল ৩০৮তম বর্ষে। ১৭১৮ খ্রিস্টাব্দে তন্ত্রসাধক ভৃগুরাম সদ্ধান্ত এই পূজার প্রবর্তন করেন। ভৃগুরামের তপস্যা ও সাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তৎকালীন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁকে তেঘরী মৌজায় ১২০০ বিঘা ভিটা জমি ও ১০০০ বিঘা মাঠের জমি দান করেন। সেই থেকেই শুরু হয় বড়শ্যামা মাতার আরাধনা।
প্রথমদিকে এই পুজো ছিল সম্পূর্ণ পারিবারিক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণে তা এখন সার্বজনীন রূপ নিয়েছে। বড়শ্যামা মাতার পূজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল — এখানে জনসাধারণের কাছ থেকে কোনো চাঁদা নেওয়া হয় না। “দি ট্রাস্টিস অব বড়শ্যামা মাতা” নামক একটি ট্রাস্টি ফান্ড থেকেই প্রতি বছর পুজোর সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন হয়।
মন্দিরটি বর্তমান রূপে গড়ে ওঠে ১৯৮৪ সালে, প্রায় ৮০,০০০ টাকা ব্যয়ে। এই মন্দিরে ২৯ ফুট উচ্চতার দেবীমূর্তি বিশেষভাবে রাস পূর্ণিমার দিনই প্রতিষ্ঠা ও পূজিত হয়। সারা বছর মাতার ঘটে পুজো হয়, তবে রাস পূর্ণিমার দিনই মূল প্রতিমা নির্মাণ করে পুজো সম্পন্ন করা হয়।
ভৃগুরামের তিন পুত্র — গদাধর, কৃষ্ণরাম ও রামগোপালের বংশধরেরাই আজও এই পূজার পুরোহিত। নিয়ম অনুযায়ী, বাইরের কোনো পুরোহিত এখানে পূজা করতে পারেন না। নবদ্বীপে বড়শ্যামা মাতার পাশাপাশি মেজো, সেজো ও ছোট শ্যামা মাতারও পুজো অনুষ্ঠিত হয়।
শতাব্দী প্রাচীন এই পুজোকে ঘিরে নবদ্বীপে প্রতিবছর ভক্তদের ঢল নামে। রাস পূর্ণিমার এই পুণ্যক্ষণে ভক্তরা বিশ্বাস করেন, বড়শ্যামা মাতার আশীর্বাদে জীবনের সকল অন্ধকার দূর হয়ে আসে। এবছরও সেই ঐতিহ্যের ধারায় ভক্তিমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হচ্ছে নবদ্বীপের বড়শ্যামা মাতার পুজো।

