আমাদের ভারত, ১২ আগস্ট : এবারের টোকিও অলিম্পিক অন্য বারের থেকে ভিন্ন ও অনন্য। বিশেষ কয়েকটি কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে টোকিও অলিম্পিক। বিশ্বজুড়ে কোভিডের প্রকোপে একবছর পিছিয়ে যাওয়ার এবং কোভিডের অন্যন্য প্রভাব, একই প্রতিযোগিতায় দুই বিজয়ীর স্বর্ণপদক পাওয়া। কিন্তু এছাড়াও যে অদ্ভুত একটা বিষয় এবারের অলিম্পিকে নজর কেড়েছে তা হল বৈদ্যুতিন – বর্জ্য পদার্থ থেকে টোকিও অলিম্পিকের ৫ হাজার বিজয়ীর পদক তৈরি হয়েছে।
পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এবং তা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে অলিম্পিক উদ্যোক্তাদের এই অভিনব পদক্ষেপ ২০১৭ সালে শুরু হয়েছিল। প্রকল্পের নাম রাখা হয় “টোকিও ২০২০ মেডেল প্রোজেক্ট- টুয়ার্ডস এন ইনোভেটিভ ফিউচার ফর অল”।
সেখানে জাপান সরকার দেশের সকল নাগরিকদের বাতিল করা বৈদ্যুতিন সামগ্রী অলিম্পিক উদ্যোক্তাদের কাছে জমা দেওয়ার আবেদন করে। এই উদ্যোগে সরকার, পৌরসভা, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং নাগরিকদের পাশাপাশি যুক্ত ছিল ১ হাজার ৩০০ শিক্ষাঙ্গন ও ২ হাজার ১০০ মোবাইল রিটেল স্টোর।
কমিটির বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দু বছর ধরে প্রায় আট মিলিয়ন টন ই-বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে যার অধিকাংশই ছিল ব্যবহৃত মোবাইল, ডিজিটাল ক্যামেরা, ল্যাপটপ এবং গেমিং ডিভাইস।
২০১৯ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে সে বছর প্রায় ৫৩.৬ মিলিয়ন টন ই-বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে এই বর্জ্যের পরিমাণ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যে ই-বর্জ্য পদার্থের ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে আসছেন বিগত দশক ধরে।
বৈদ্যুতিন সামগ্রীতে যেমন লিড, আর্সেনিক, নিকেল পারদ সহ বিভিন্ন দুষিত ও ক্ষতিকারক দ্রব্য থাকে তেমনি থাকে সোনা, প্লাটিনাম, রূপা, এলুমিনিয়াম, কপারের মত ধাতু। কাজেই এই বর্জ্যকে শোধন করে বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা একমাত্র উপায়।
এই কারণেই বর্জ্য পদার্থকে পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করার উদ্দেশ্য ভারতের মতো বিভিন্ন দেশের সরকার নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এমনকি সে দেশগুলির আইনে তার বিধিও আছে।
এই পন্থায় অগ্রসর হয়েই অলিম্পিকে পদক তৈরীতে ই-বর্জ্যের ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এই ধরণের প্রথমে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে। এই অলিম্পিকের রূপো ও ব্রোঞ্জ পদকের ৩০ শতাংশ ছিল ই-বর্জ্য থেকে নিষ্কাশিত। তার সূত্র ধরেই জাপানেও এই প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
অলিম্পিক কমিটির দেওয়া তথ্যে, ৭৮ হাজার ৯৮৫ টন ই-বর্জ্য থেকে প্রায় ৭০ পাউন্ড সোনা, ৭হাজার ৭০০ পাউন্ড রূপা এবং ৪ হাজার ৮১০ পাউন্ড ব্রোঞ্জ পাওয়া গেছে। ফলে সাশ্রয় হয়েছে অর্থের, পুনর্ব্যবহার হয়েছে বর্জ্যের এবং একই সঙ্গে জাপানের ৯০ শতাংশ জনগণকেও অলিম্পিকের মতো একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে এই প্রকল্পে।