সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৭ জুন: সারা রাজ্যের মতোই বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুমকি উপেক্ষা করেই গোঁজ প্রার্থীর ছড়াছড়ি, আর এই গোঁজ কাঁটার সাথে সাথে শুরু হয়েছে দল ছাড়ার হিড়িক।
মালদা, মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের ক্ষয় রোগ শুরু হয়েছে সাগরদিঘি থেকে। তা চলছে ক্রমান্বয়ে। এবার সেই রোগ সংক্রামিত হয়ে আছড়ে পড়ল বাঁকুড়ায়। তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিলেন একাধিক নেতা কর্মী। গতকাল সন্ধেয় গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লক তৃণমূলের এক স্যোশাল মিডিয়ার নেতা তার অনুগামীদের নিয়ে যোগ দিলেন জাতীয় কংগ্রেসে। অপরদিকে বাঁকুড়া পৌর এলাকার ডাকাবুকো যুবনেতা তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর সুদীপ ওরফে মুন্না চক্রবর্তী আজ জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। শুধু তাই নয় আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনি জাতীয় কংগ্রেসের প্রতীকে জেলা পরিষদে প্রার্থী হয়েছেন। জেলা পরিষদের ৩০নং আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন, যেখানে তৃণমূলের প্রার্থী জেলা যুব তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি শিবাজী ব্যানার্জি। এনিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হয়েছে জেলাজুড়ে।
সুত্রের খবর, আরও বড় ধাক্কা নাকি অপেক্ষা করছে তৃণমূলের জন্য। একদা শহর বাঁকুড়ার দাপুটে যুবনেতা সুদীপ কংগ্রেসে চলে যাওয়ায় রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
বিগত পৌর নির্বাচনে সুদীপ চক্রবর্তীর জেতা ১৭নম্বর ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় তার স্ত্রী অনন্যা চক্রবর্তী ওই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অনন্যা দেবীও এই আসনে তৃণমূল দলের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছেন। কিন্তু দল তাকে টিকিট না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ মুন্নার স্ত্রী নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃণমূল প্রার্থীকেই হারিয়ে দেন।
এদিকে গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের স্যোশাল মিডিয়ার কর্মী গগন ঘটক তাঁর বেশ কিছু অনুগামীকে নিয়ে শুক্রবার মেজিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১নং গেটের নির্বাচনী কার্যালয়ে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিলেন। তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন বাঁকুড়া জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুনীল মণ্ডল ও ব্লক সভাপতি কালীপদ মণ্ডল।
তৃণমূল ছাড়ার কারণ হিসেবে গগন ঘটক বলেন, দলের পচন দেখে বিবেক দংশনে ভুগছিলাম দীর্ঘদিন ধরে। তবুও দলের আনুগত্য মেনে স্যোসাল মিডিয়ায় সোচ্চার ছিলাম। তারপর যখন সত্যি সত্যি উপলব্ধি করলাম দলে কয়লা, বালি পাথর, গোরু চুরির সাথে মানব সম্পদ লুঠ করে রাজ্যটাকে দেউলিয়া করে দিয়েছে তৃণমূলের মাথারা, তখন আর থাকতে পারলাম না। কংগ্রেস ঘরানার ছেলে আমি। তাই কংগ্রেসের পতাকা হাতে নিলাম। এবার নিজেকে কলুষ মুক্ত করে জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের নির্দেশ মত কাজ করব। তিনি দলে যোগ দেওয়ার আগেই কংগ্রেসের হয়ে গঙ্গাজলঘাঁটি পঞ্চায়েত সমিতির ৩ নং আসনে স্ত্রী নিবেদিতা ঘটককে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন করিয়েছেন। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তার তৃণমূল ছাড়াকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। গগন ঘটক ইতিমধ্যে রাজ্যের দুর্নীতি বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন।
গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি কালীপদ মণ্ডলের দাবি, আগামী দিনে সকলকে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে আসতে হবে। গগন ঘটকের মতো তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী কংগ্রেস দলে আসায় দলের শক্তি বৃদ্ধি হল বলে মনে করছেন জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুনীল মণ্ডল।
গগন ঘটকের কংগ্রেসে যোগদান প্রসঙ্গে তৃণমূল ব্লক সভাপতি নিমাই মাজি বলেন, উনি কখনও দলের কোনো পদে ছিলেন না। সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বও দেওয়া হয়নি তাকে। উনি যদি নিজেকে তৃণমূলের সোস্যাল মিডিয়ার নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে কোনো দলে যোগ দেন তাহলে সেটা সেই দলের দৈনতাকেই তুলে ধরা হয়েছে। তবে ফেসবুকে বিরোধীদের কিছু কিছু বিতর্কিত মন্তব্যের জবাব দিতে দেখেছি ওনাকে। হয়তো উনি তৃণমূলের সমর্থক ছিলেন বলেই তা করতেন বলে মন্তব্য করেন নিমাই মাজি। ওরকম কে গেল বা এল তাতে তৃণমূলের কিছু যায় আসে না।
এবিষয়ে বিজেপির গঙ্গাজলঘাঁটি মন্ডল সভাপতি ভাস্কর লাহা বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে অন্য দলের টিকিট নিয়ে যারা জিতবে তারা তো বায়রন বিশ্বাস মডেলে বিশ্বাসী। এটা তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষই ঘোষণা করে রেখেছেন।