Sukanta, TMCP leader, উপাচার্যকে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়ার নেওয়ার হুমকি টিএমসিপি নেতার, নিন্দায় সরব সুকান্ত সহ বিজেপি নেতৃত্ব

আমাদের ভারত, ২৭ আগস্ট: ২৮ আগস্ট পরীক্ষা দেওয়ার কারণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন টিএমসিপি নেতা। সেই বক্তব্যের ভিডিও পোস্ট করে নিন্দায় সরব হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার সহ বিজেপি নেতৃত্ব।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস ২৮ আগস্ট। সেই দিন পরীক্ষা পিছানো যাবে না। এ কথা আগে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত দে। সেই সিদ্ধান্তের কারণেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা উপাচার্যকে আক্রমণ শানান। শাসক দলের ছাত্র নেতা অভিরূপ চক্রবর্তী তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানান শান্তা দত্ত দে’কে। যে ভিডিও পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে।

সেই ভিডিওটি শেয়ার করে সুকান্ত মজুমদারও সরব হয়েছেন। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, তৃণমূলের অরাজকতা ও অনাচারের শাসনামলে, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থা, ছাত্রসমাজ এবং এর শিক্ষিত সমাজের ভিত্তিকে অন্ধকারের যুগে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তথাকথিত এই ‘ছাত্রনেতা’ যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন তা ছিল হিংস্রতা এবং অশ্লীলতায় ভরা, এমন শব্দ যার শিক্ষার্থীদের মর্যাদার সাথে সাদৃশ্য নেই। এই ধরনের ভাষা ব্যবহারকারীর কখনই কোনও অ্যাকাডেমিক ফোরামের প্রতিনিধিত্ব করা উচিত নয়।

কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আরও লিখেছেন, এই অপমান‌ কেবল উপাচার্যকেই অপমান করা হয়নি, বরং বাংলার সমগ্র শিক্ষিত সমাজকে অপমান করা হয়েছে। রাজ্যের গর্বিত ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করা হয়েছে।

তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সেই একই বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখার্জি, ভারত কেশরী ড: শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মতো উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বরা একসময় উপাচার্যের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এখন অবমাননাকর স্লোগান এবং প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে এর দরজা বন্ধ করে দেওয়া বাংলার শিক্ষার ঐতিহ্যের উপর সরাসরি আক্রমণের চেয়ে কম কিছু নয়।

এরপরই সুকান্তবাবু রাজ্য রাজনীতিতে অন্যতম বড় ইস্যু বাঙালি অস্মিতার কথা টেনে লিখেছেন, “বাঙালি, বাঙালি” এই ফাঁকা চিৎকার দিয়ে ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার হতাশায়, ক্ষুদ্র ও বিভেদমূলক রাজনীতির আশ্রয় নিয়েছেন। সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের জনগণকে প্রতারিত করেছেন। তার দলের ছাত্র নেতাদের আচরণ, তার নির্ধারিত পথে হেঁটে, অশ্লীলতা এবং বিশৃঙ্খলার গভীরতা প্রকাশ করে যা বাংলাকে লজ্জায় ফেলছে।

প্রসঙ্গত, ২৮ আগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস। ওই দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিএ, বিএসসি, বিএ-এলএলবি’র চতুর্থ সেমিস্টার- এর পরীক্ষা। ঐদিন পরীক্ষা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছিল টিএমসিপি’র তরফে, কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে স্পষ্ট জানিয়ে দেন কোন মতেই পরীক্ষা পিছোবে না। আর এর পরই তাকে আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। বিজেপি যে ভিডিও প্রকাশ করেছে তাতে শান্তা দত্ত দে’কে হুঁশিয়ারি দিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, উপাচার্যকে তিনি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেবেন। যারা তাকে সমর্থন করছেন তাদের বিরুদ্ধেও আক্রমণ শানান তিনি। ভিডিওতে অভিরূপকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “২৮শে আগস্ট পরীক্ষা রেখেছেন, এত বড় বেহায়া আমি দেখিনি। উনি বলছেন, তার যোগ্যতা নিয়ে কেউ ঘেউ ঘেউ করছে। আমরা যদি ঘেউ ঘেউ করি আপনিও রাজ্যপালের কাছে বারবার মিউ মিউ করছেন। ২৮ আগস্ট এর পর ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেব।”

এখানে না থেমে তিনি আরো বলেন, যারা ভিসির দালালি করছেন তাদের গণতান্ত্রিকভাবে থাপ্পড় মারা হবে, যাতে তারা আর উঠে দাঁড়াতেই না পারে। অভিরূপের এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে প্রবল নিন্দার ঝড়। বয়স ও অভিজ্ঞতায় বহু এগিয়ে থাকা উপাচার্যকে এইভাবে অপমান করা যায়? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কিন্তু নিজের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ অভিরূপ জানিয়েছেন, শান্তা দত্ত দে’কে উপাচার্য বলা যায় না, কারণ তিনি বেআইনীভাবে পদে বসে রয়েছেন। ওর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা উচিত বলে ও মন্তব্য করেন তিনি।

গত সোমবার একাধিক কলেজের অধ্যক্ষ চিঠি পাঠান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের কাছে। সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, বঙ্গবাসী কলেজ সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছাত্র-ছাত্রী নয়, টিচিং স্টাফ, এমনকি কিছু সংগঠনও নাকি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে রাজি নয়। তাদের বক্তব্য, ২৮ আগস্ট পরীক্ষা দিন নির্ধারণ হলে শিক্ষার্থীদের একাংশ সমস্যায় পড়বেন। কিন্তু সে আর্জিকে কার্যত গুরুত্ব দেননি শান্তা দত্ত দে। তিনি স্পষ্ট বলেন, পরীক্ষা কি কোন পিকনিক নাকি? বিশ্ববিদ্যালয় তার অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরীক্ষার দিন ঘোষণা করে। পরীক্ষায় বসা পড়ুয়ার দায়িত্ব। অধ্যক্ষ যদি এভাবে চিঠি ফরওয়ার্ড করে দেন তাহলে শিক্ষার ডিসিপ্লিন বলে কিছু থাকবে না। মুখ্যমন্ত্রী পরীক্ষা নিয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলেন বলে জানান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য। কিন্তু তিনি সেই আর্জিও মানেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *