পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১৯ জানুয়ারি: দিনের আলোতেই পার্টি অফিসের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল এক তৃণমূল কর্মীর। এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরও রহস্য মৃত্যু। যদিও তৃণমূলের দাবি, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই কালীপদ সরকার নামে ওই তৃণমূল নেতার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর থানার ৩/২ বেলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর নারায়ণপুরে। যদিও তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের পরিবারের লোকজনেরা এলাকার বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। এদিন ঘটনার পরেই এলাকার লোকেরা উত্তেজিত হয়ে অভিযুক্তদের বাড়ি ভাঙ্গচুর করার পাশাপাশি আগুনও ধরিয়ে দেয়। ঘটনার পরেই এলাকায় পৌছে পুলিশ একটি পিস্তল, চারটি তাজা বোমা উদ্ধার করার পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ জনকে আটক করেছে। এলাকায় বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট। ভোটের আগে দিনের আলোতে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এমন শুট আউটের ঘটনাকে ঘিরে রীতিমতো আলোড়ন ছড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে শুট আউট হওয়া ওই যুবকের নাম সঞ্জিত সরকার (৩১)। বাড়ি গঙ্গারামপুর থানার নারায়ণপুরে। এদিকে ঘটনাস্থল থেকে সামান্য দূরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা নারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা কালিপদ সরকারের রহস্যমৃত্যু নিয়েও ছড়িয়েছে জোর জল্পনা। যদিও বিজেপির দাবি, ভাগা নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বচসার জেরেই এমন সংঘর্ষ। আর যার জেরেই মৃত্যু হয়েছে ওই দু’জনের বলে জানিয়েছেন সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। এদিন এমন ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই সেখানে ছুটে আসেন জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান বিপ্লব মিত্র, জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দাস, সহকারি সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা সহ জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতারা।
জানা যায়, এদিন সকালে সঞ্জিত সরকার নামে ওই তৃণমূল কর্মী মাঠের কাজ সেরে এসে নারায়ণপুরের পার্টি অফিসে বসেছিল। ঠিক তখনই দুষ্কৃতিরা এমন ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যায় এলাকা থেকে। যার পরেই এলাকাবাসীরা উত্তেজিত হয়ে অভিযুক্ত সুমন রায়ের বাড়ি ভাঙ্গচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ঘটনার পরেই জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গ্রামীণ, গঙ্গারামপুর থানার আইসি পূর্ণেন্দু কুন্ডু সহ বিরাট পুলিশ বাহিনী সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
মৃতের মা ও মৃতের আত্মীয় যমুনা সরকার অভিযোগ করে বলেন, সঞ্জিত মাঠ থেকে মাটি কাটার কাজ করে এসে সকালে নারায়ণপুর পার্টি অফিসে বসেছিল। সেই সময় সুমন, নেপালের লোকজন মিলে সঞ্জিতকে গুলি করে খুন করেছে। আমরা চাই দোষীদের কঠোর শাস্তি হোক।
তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা চেয়ারম্যান বিপ্লব মিত্র জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কালিপদ সরকারের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। বহুদিন আমাদের সঙ্গে দল করেছে ও। পঞ্চায়েতের বিভিন্ন পদে ছিল ও। বাকি কিছু তার জানা নেই।
প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কালিদার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী সঞ্জিতও মারা গেছে। দলে কোনও রকম গুন্ডামি ও মস্তানি কার্যকলাপ সহ্য করব না।
জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত জানিয়েছেন, পুলিশ খুনের ঘটনায় ব্যবহার করা পিস্তল, চারটি তাজা বোমা উদ্ধার করার পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতজনকে আটক করে ঘটনার তদন্তে নেমেছে। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। বিধানসভা ভোটের আগে এমন ঘটনায় ব্যাপক শোরগোল পড়েছে জেলাজুড়ে।