আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, বীরভূম, ৫ মে: ফের অস্বাভাবিক মৃত্যু হল বীরভূমের ময়ূরেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যের। মল্লারপুর থানার খরাসিনপুর গ্রামের কাছে রাস্তার ধার থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করার পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।
বীরভূমের মল্লারপুর থানার খরাসিনপুর গ্রামে বুধবার রাতের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কাজী নুরুল হাসান ওরফে আকাশ নামে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যকে খুন করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবারের অভিযোগ। তবে বিরোধী দল নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দলের এবং তোলাবাজির জেরেই কাজী নুরুল হাসান খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম কাজী নুরুল হাসান ওরফে আকাশ (৩১)। ময়ূরেশ্বরের ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা। কাজী নুরুল হাসানকে বুধবার রাতে খরাসিনপুর গ্রামের রাস্তার ধার থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তারপর তাঁকে প্রথমে মল্লারপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বৃহস্পতিবার ভোরে বর্ধমান নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। কাজী নুরুল হাসানকে খুন করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবারের অভিযোগ। তদন্ত শুরু করেছে মল্লারপুর থানার পুলিশ।
কাজী নুরুল হাসানের স্ত্রী মৌসুমি বিবি ও কাকা আবুল কালাম আনসার জানান, বুধবার বিকেলে কাজী নুরুল হাসান ময়ূরেশ্বরের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে মল্লারপুর গিয়েছিলেন। তারপর রাত হয়ে গেলেও বাড়ি ফেরেননি। তখন কাজী নুরুল হাসানের মোবাইলে ফোন করেন তাঁর স্ত্রী। রাতে পুলিশ তাঁকে জানায়, কাজী নুরুল হাসান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন। তাকে মল্লারপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। সেখান থেকে পরিবারের লোকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। বৃহস্পতিবার তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর জন্য দলীয় সদস্যদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কাজী নুরুল হাসানের স্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই খুন হয়েছেন ময়ূরেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের এই সদস্য। বিষয়টি দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, ময়ূরেশ্বরের বিধায়ক অভিজিৎ রায়কে জানিয়েও কোনো সুরাহা মেলেনি।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর ময়ূরেশ্বর পঞ্চায়েতের প্রধান হন লালু শেখের স্ত্রী আলেয়ারা বিবি। ২০২১ সালে দলীয় সদস্যদের চাপে আলেয়ারা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর প্রধান হন মুর্শেদ শেখ ওরফে মোশারফ অনুগামী চামেলি গড়াই। পঞ্চায়েতের ১৬ টি আসনের মধ্যে ১৪ টি তৃণমূল দখল করে। দুটি যায় বিজেপির দখলে। দলের দ্বন্দ্ব মেটাতে অনুব্রতর নির্দেশে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু তাতেও দ্বন্দ্ব মেটেনি। এমনকি মোশারফ বিরোধীদের পঞ্চায়েতেও ঢুকতে দেওয়া হত না বলে মৃত আকাশের স্ত্রী মৌসুমির দাবি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত রাস্তার কয়লা, বালি, পাথর এবং পঞ্চায়েতের দখল নিয়েই দ্বন্দ্ব। অভিযুক্ত মোশারফ মল্লারপুর থানার ডাক মাষ্টার। এমনকি পঞ্চায়েতের সমস্ত লেনদেন তাঁর মাধ্যমেই হত। তাতে প্রতিবাদ করতে গেলেই প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হত। প্রতিবাদ করায় কিছুদিন আগে আকাশের বাড়িতেও মোশারফ চড়াও হয় বলে স্ত্রী মৌসুমি বিবির অভিযোগ। প্রাক্তন প্রধানের স্বামী লালু শেখের অভিযোগ, মোশারফ অসৎ উপায়ে টাকা আদায় করত। জোর করে জমি দখল করে টাকা তুলত। এমনকি মল্লারপুর থানার ডাকমাষ্টার হয়ে রাস্তার গাড়ি থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করত। এই তোলাবাজি নিয়েই দ্বন্দ্ব। তাতেই প্রাণ গেল আকাশের।
তৃণমূলের ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর ব্লক সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র বলেন, “পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। কোনো দোষীকেই ছাড়া হবে না”।
প্রসঙ্গত, গত ২১ মার্চ রাতে বীরভূমের বগটুই গ্রামে খুন হন বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপ-প্রধান ভাদু শেখ। তারপরই উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। ভাদু শেখের খুনের বদলা নিতে তাঁর অনুগামীরা গ্রামে পরপর দশটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বলে অভিযোগ। আগুনে পুড়ে মারা যায় ১০ জন। যা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য-রাজনীতি। তারপর ফের তলাবাজি নিয়ে মৃত্যুকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।