তৃণমূলের নতুন প্রকল্প “পাড়ায় পাড়ায় সমাধান”, স্থানীয় স্তরের ছোট ছোট কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে, বীরভূমে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

আশিস মণ্ডল, বীরভূম, ২৮ ডিসেম্বর: দুয়ারে সরকারের পর এবার “পাড়ায় পাড়ায় সমাধান” নাম দিয়ে আরও একটি প্রকল্প চালু করল সরকার। ওই প্রকল্পে স্থানীয় স্তরের ছোট ছোট কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বিশ্বভারতীকে দেওয়া রাস্তা ফিরিয়ে নিয়ে সঙ্ঘাতে জড়াল রাজ্য।

দুয়ারে দুয়ারে সাফল্যর পর এবার পাড়ায় পাড়ায় সমাধান। সোমবার বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে এই প্রকল্পের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই প্রকল্পে স্থানীয় স্তরে কালভার্ট, ঐচ্ছিক ক্লাসঘর, অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র, ছোটখাটো রাস্তা, পাড়ায় পাড়ায় শৌচালয়, জলের পাইপলাইনের মতো ছোট ছোট কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। নতুন বছরে ২ জানুয়ারি থেকে ওই প্রকল্প চালু হবে। শেষ হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সামনে বিধানসভা নির্বাচন। ফলে তার আগে যদি পাড়ায় পাড়ায় সমাধানের কাজ শেষ করা না যায় তাহলে আবেদনকারীকে ফোনে জানিয়ে দেওয়া হবে কতটা কাজ হয়েছে”।

মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ইতিমধ্যে ছোট ছোট কাজের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে দশ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এই প্রকল্পের জন্য আলাদা টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। তারাই সমস্ত কাজ পর্যালোচনা করবে। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন জাতি শংসাপত্র প্রদানের কাজ দ্রুত এবং সরলীকরণ করতে হবে। পরিবারের কারও জাতি শংসাপত্র থাকলেই অন্য সদস্যদের জাতি শংসাপত্র দিতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। তাই প্রতিদিন মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে জাতি শংসাপত্রের রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট দফতরকে।

ভারত-চীন সীমান্তে শহিদ বীরভূমের মহম্মদ বাজারের জওয়ান রাজেশ ওরাংয়ের বোন শুকুন্তলার হাতে এদিন নিয়োগপত্র তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাঁচামি পাথর এলাকায় ৪৪ একরের মধ্যে ফাঁকা থাকা ২৬ একরে কাজ শুরুর নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এলাকার মানুষের সমস্যা না করে কাজ শুরুর অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, “কয়লা উত্তোলন শুরু হলে এলাকার প্রায় এক লক্ষ বেকার চাকরি পাবে। যাদের জমি রয়েছে তাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হবে। ওখানে দুই মিলিয়ন কয়লা রয়েছে। সেই কয়লা তুলতে পারলে দেশে ১০০ বছর বিদ্যুতের কোনও সমস্যা হবে না”।

এদিন বিশ্বভারতীকে দেওয়া পূর্ত দফতরের রাস্তা ফেরত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে বসে আশ্রমীকদের দেওয়া একটি চিঠি পড়ে শোনান তিনি। চিঠিতে আশ্রমিকরা লিখিছেন শিক্ষা ভবন থেকে শান্তিনিকেতন –শ্রীনিকেতন সংযোগকারী রাস্তা কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভারি গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। এখন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওই রাস্তা পূর্ত দফতরের ছিল। বিশ্বভারতীর অনুরোধে আমরা রাস্তা তাদের দিয়েছিলাম। কিন্তু বোলপুরে আসার আগে আমরা ওই রাস্তা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিশ্বভারতীকে চিঠি দিয়েছি”। একই সঙ্গে এদিন বোলপুরে নবনির্মিত বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে স্বপন দত্ত’র নাম ঘোষণা করেন। তাঁকে নির্দেশ দেন, “বিশ্বভারতীর আদলে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলুন। কলা, সংস্কৃতি যেন বিশ্বভারতী ঘরানার মতো হয়। এখন বিশ্বভারতীতে পৌষ মেলা, বিভিন্ন অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো করার উপর জোর দিন”।

মুরারইয়ে বাইপাস রাস্তা এবং গ্রামীণ হাসপাতালের উন্নতি করার দাবি জানান মুরারইয়ের বিধায়ক আব্দুর রহমান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই মুহূর্তে আর হাসপাতালের উন্নয় করা যাবে না। ভোটের আগে রাস্তাও করা যাবে না”। অবশ্য এই সময় মুখ্যমন্ত্রীর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “ওই রাস্তা এখন মাপজোক চলছে। মাপজোক হলেই কাজ শুরু হবে”। দুবরাজপুর বিধায়ক নরেশ বাউরি বলেন, “৬০ নাম্বর জাতীয় সড়কের কাজ থমকে থাকায় সমস্যা হচ্ছে”। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তোমরা পোষ্টার সাঁটিয়ে আন্দোলন শুরু করো কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। তাদের যে আধিকারিক রয়েছে তাদের অফিস ঘেরাও করো। এবং জানিয়ে দাও তারা না পারলে রাজ্যকে দিক। আমরাই রাস্তা বানিয়ে দেব”।

পুলিশের বদলি প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপারকে তিনি বলেন, “যারা যারা থানায় দুই বা তার বেশি বছর ধরে পোস্টিং রয়েছে। তাদের তালিকা দিন। আপাতত তাদের অন্য জায়গায় সরিয়ে দিন। ভালো কাজ করলে আবার ফিরিয়ে আনব। যারা ভালো কাজ করবেন তাড়া জিন্দেগীভর একই থানায় কাজ করবেন”। এদিন প্রশাসনিক সভা থেকে বক্রেশ্বরের উন্নয়নে তিন কোটি, ফুল্লরার উন্নয়নে এক কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারাপীঠ, বীরচন্দ্রপুরের উন্নয়নেও টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। সেই সঙ্গে জেলায় মোরব্বা হাব তৈরির সম্ভবনার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *