বীরভূম জেলা বইমেলায় আমন্ত্রণ পেলেন না তিন বিধায়ক

আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ৭ জানুয়ারি: ফের ব্রাত্য বইমেলায় বিরোধী বিধায়করা। আমন্ত্রণ পত্রে নাম রাখা তো দূরের কথা, সামান্য কার্ড পাঠিয়ে তাদের আমন্ত্রণটুকুও জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। এর আগের বইমেলায় নাম থাকলেও বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় এবার ব্রাত্যর দলে পড়েছেন লাভপুরের বিধায়কও। এনিয়ে দায় এড়িয়েছেন সকলে।

২০০৪ সালের ১০ ডিসেম্বর। শাসক দলে ছিল বামফ্রন্ট। সেবার রামপুরহাট হাইস্কুল মাঠে হয়েছিল ত্রয়োবিংশ জেলা বইমেলা। সেই সময় রামপুরহাটের বিধায়ক ছিলেন তৃণমূলের আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, আর হাঁসন কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন কংগ্রেসের (এখন বোলপুরের তৃণমূল সাংসদ) অসিত মাল। বইমেলার আমন্ত্রণ পত্রে জেলার সব বাম বিধায়কের নাম থাকলেও ব্রাত্য রাখা হয়েছিল আশিসবাবু এবং অসিতবাবুকে। স্বাভাবিক ভাবেই গোঁসা করে দুই বিধায়ক বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করেছিলেন। আশিসবাবু বলেছিলেন, “শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই আমন্ত্রণপত্রে নাম রাখা হয়নি। অথচ সিপিএম নেতাদের নাম বড় বড় অক্ষরে ছাপান হয়েছে।” অসিতবাবু বলেছিলেন, “সিপিএম বইমেলাকে পার্টি সম্মেলনে পরিণত করেছে। এটা খুবই লজ্জাজনক।” এরপর কেটে গিয়েছে ১৬ টি বছর। বদলে গিয়েছে সরকার। কিন্তু বদলায়নি বামফ্রন্টের ছেড়ে যাওয়া সংস্কৃতি। তাই তো এখন লজ্জায় মুখ ঢাকছেন শাসক দলের মন্ত্রী থেকে নেতারা।

বুধবার ৩৯ তম বইমেলা শুরু হয়েছে রামপুরহাট পুরসভা মাঠে। আমন্ত্রণপত্রে ফিরে এসেছে বাম সংস্কৃতির ছায়া। জেলার ১১ জন বিধায়কের মধ্যে শাসক দলের ৮ জন বিধায়কের নাম সম্মানীয় অতিথিবর্গের তালিকায় ঠাঁই হয়েছে। ওই তালিকায় জায়গা পাননি রামপুরহাটের ঢিল ছোঁড়া দুরত্বের হাঁসন বিধানসভার বিধায়ক কংগ্রেসের মিল্টন রশিদ, নানুরের সিপিএম বিধায়ক শ্যামলী প্রধান ও লাভপুরের বিধায়ক তৃণমূলের (এখন বিজেপি) মনিরুল ইসলাম। বিজেপিতে যাওয়ায় ব্রাত্যদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন মনিরুল ইসলাম।

সাংসদ অসিত মাল বলেন, “আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাই মেলায় হাজির ছিলাম। কাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বা কার্ডে নামে নেই সেটা কমিটি বলবে।”

এনিয়ে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয়েছিল কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি ফোন না ধরায় প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
জেলা গ্রন্থাগারিক তথা বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব নির্মাল্য অধিকারী বলেন, “আমন্ত্রপত্র ছাপানর দায়িত্ব আমার ছিল না ফলে এনিয়ে কিছু বলতে পারব না।” তবে কার দায়িত্ব ছিল তাও তিনি জানাননি।

নানুরের বিধায়ক সিপিএমের শ্যামলী প্রধান ব্যাঙ করে বলেন, “এখানে যে বইমেলা হচ্ছে সেটা তৃণমূলের টাকায়। তাই আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না। সরকারি টাকায় হলে আমাদের ডাকত। শুধু এবার নয়, কোনওবারই আমাদের জানানো হয় না। এটাই ওদের সংস্কৃতি।”

মিল্টন রশিদ বলেন, “বাম আমলে যারা আমন্ত্রণপত্র না পেয়ে গোঁসা করে বাড়িতে বসেছিলেন, দলের কাজকর্মে তাঁরাই এখন লজ্জিত। আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় একজন অধ্যাপক। আমি তাঁর ছাত্র। কিন্তু এখন আমার স্যার কলেজে আমাদের যা শিখিয়েছিলেন সেই সমস্ত নীতিকথা জলাঞ্জলি দিয়েছেন। শুধু বিধায়ক পদ এবং মন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখতে অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করে চলেছেন। তাই তাঁর মুখে কোনও ভাষা নেই। তাঁরা এখন মানবিকতাকেও বিসর্জন দিয়েছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় স্যারের বাড়ির সামনে সাদা কাপড়ে মুখ ঢেকে বোমা ও অস্ত্র হাতে দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়ালেও তিনি দেখতে পাননি। তাঁর দলের জেলা সভাপতি তাঁকে সহস্রাধিক মানুষের সামনে অপদার্থ বলে অপমান করলেও তিনি তা হজম করে নিয়েছেন। ফলে দলের ভয়েই তিনি বিরোধী বিধায়কদের বঞ্চিত করে রেখেছেন।” ফোন করেও এনিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি মনিরুল ইসলামের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *