তিনশো বছরের প্রাচীন স্নান যাত্রা বন্ধ ভদ্রপুর গ্রামে

আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ১৮ অক্টোবর: করোনা মহামারী আতঙ্কে এবার আর দশমীতে মিলন উৎসব হবে না বীরভূমের ভদ্রপুর গ্রামে। বন্ধ আকালীপুর গ্রামের চতুর্দশীর মেলা। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে মুখভার গ্রামবাসীদের। তবে পরিস্থিতির কথা ভেবে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে মান্যতা দিয়েছেন সকলেই।

প্রতিবছর দশমীর অপরাহ্নে স্নান যাত্রায় মাতেন নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের ভদ্রপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। গ্রামবাসীদের কাছে এই স্নান যাত্রা মিলন উৎসব বলে পরিচিত। কথিত আছে মহারাজ নন্দকুমার এই স্নান যাত্রার প্রচলন করেছিলেন। কবে থেকে এই স্নান যাত্রার সূচনা হয়েছিল তার সঠিক দিনক্ষণ কেউ বলতে না পারলেও অনুমান করা যায় প্রায় তিনশো বছর আগে এই মিলন উৎসবের সূচনা হয়েছিল। একটি সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক ১৭০৫ সালে মহারাজ নন্দকুমার জন্মগ্রহণ করেন ভদ্রপুর গ্রামে। ১৭৭৫ সালের মে মাসে মোহন প্রসাদের মিথ্যা জালিয়াতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক তাঁর ফাঁসির আদেশ দেন। তার ২২ দিন পর ৮ জুলাই নন্দকুমারকে কলকাতার ময়দানে ফাঁসি দেওয়া হয়। জীবিত থাকাকালীন মহারাজ নন্দকুমার কাশিতে গিয়ে স্নান যাত্রা প্রথা দেখে এসেছিলেন। তারপরই ভদ্রপুর গ্রামে ফিরে ওই প্রথা চালু করেন। সেই রীতি এতদিন ধরে চলে আসছে ভদ্রপুর গ্রামে। শুধু ভদ্রপুর গ্রামেই নয়, আশপাশের গ্রামের মানুষও ভদ্রপুরে গ্রামে এসে স্নান যাত্রা উৎসবে অংশ নিতেন।

এবার ঘটল ছন্দপতন। রবিবার নলহাটি ২ নম্বর ব্লকে প্রশাসনিক বৈঠকে স্নান যাত্রা বন্ধের অনুরোধ করা হয়। গ্রামের বাসিন্দা সত্যনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রতিবছর দশমী দিনের জন্য অপেক্ষা করেন গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। ওই দিন অপরাহ্নে গ্রাম্যদেবতা ভদ্রকালীর মন্দিরের সামনে দোলা নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পুজার্চার পর গ্রামের ১৩ টি মণ্ডপের দোলা ও ঘট বের করে শোভা যাত্রার মাধ্যমে ব্রাহ্মণী নদীর ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ঘট নিরঞ্জনের পাশাপাশি স্নান সেরে ঘাটে উঠে নিজেদের মধ্যে আলিঙ্গন করেন গ্রামবাসীরা। পুরুষরা ওইদিন সকলে নতুন গামছা নিয়ে ও গায়ে হলুদ মেখে নদীর ঘাটে যান। স্নান যাত্রাপথে মহিলারা শঙ্খ এবং উলুধ্বনি দেন। স্নান যাত্রা শেষে মহিলারা নিজেদের মধ্যে সিঁদুর খেলায় মাতেন। প্রায় তিনশো বছর ধরে চলে আসা এই রীতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। তবে এবার করোনা মহামারীর কারণে সেই প্রাচীন রীতি বন্ধ করা হল”।

বিডিও হুমায়ূন চৌধুরী বলেন, “দশমীর স্নান যাত্রায় বহু মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। জমায়েত এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মেলাও বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সকলকেই সরকারি নির্দেশ মেনে চলতে হবে”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *