আশিস, মণ্ডল, বোলপুর, ২৩ ডিসেম্বর: “উপাচার্যকে যারা নিয়োগ করেছেন তারা গুজরাট দাঙ্গার কারণে জেলে ছিলেন”, শান্তিনিকেতনের বিকল্প পৌষ মেলার উদ্বোধনে এসে এভাবেই বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কুৎসার জবাব দিলেন রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
শুক্রবার বোলপুর ডাকবাংলো মাঠে রাজ্যসরকার আয়োজিত বিকল্প পৌষমেলায় অতিথি তালিকার নামে জায়গা না পেয়ে এই মেলা নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ করে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, দুর্নীতিপরায়ণদের সাথে এক মঞ্চে বসতে হবে না, এটাই স্বস্তি। তার জবাবে পৌর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী সহ অন্যান্য সবাই এদিন তাঁদের বক্তব্যে উপাচার্যর মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। ৬ দিন চলবে এই বিকল্প পৌষ মেলা৷ মেলার সূচনা করেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। উপস্থিত ছিলেন, ক্ষুদ্র-মাঝারি ও কুটির শিল্প মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর, বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত ও সবুজকলি সেন, পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত, বীরভূমের জেলা শাসক বিধান রায়, জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী সহ অন্যান্য বিধায়করা৷

বিকল্প পৌষমেলার উদ্বোধনে এসে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম উপাচার্যর পাল্টা বক্তব্যে বলেন, “উপাচার্যকে যারা নিয়োগ করেছেন তারা গুজরাট দাঙ্গার কারণে জেলে ছিলেন। পরে ক্লিনচিট পেয়েছেন৷ যতক্ষণ না কেউ দোষী, ততক্ষণ কেউ অপরাধী নয়৷ কেন রবীন্দ্র আদর্শ সরিয়ে আরএসএস-এর আদর্শ নিয়ে আসছে৷ ওনার উপাচার্য থাকা উচিত নয়৷”
তিনি আরও বলেন, “ইডি-সিবিআই তো অমিত শাহকেও ডেকেছিল, অনেক বিজেপি নেতাকে ডেকেছিল৷” ফিরহাদ বলেন, বাবার বন্ধু ছিলেন, আশ্রমিক অধ্যাপক সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবার সঙ্গে কতবার তাঁর বাড়ি এসেছি। মেলায় ঘুরেছি। ভাবতাম, এইখানেই এই গাছতলায় তো কবিগুরু বসেছেন। এই পথ দিয়ে তো হেঁটেছেন। কবিগুরু বাঙালি তথা দেশকে বহিঃর্বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছেন। আমাদের আবেগ বিশ্বভারতী। কবির পদচারণায় তা আমাদের তীর্থক্ষেত্র। তিনি আর্য, অনার্য, হিন্দু মুসলমান সকলকে আশ্রয় দিয়েছেন। বঙ্গভঙ্গের সময় সবাইকে একতাবদ্ধ করেছেন। কয়েকবছর ধরে বিশ্বভারতীতে সেই ভাবধারার অভাব চোখে ধরা পড়ছে। বিশ্বভারতীর উদ্যোগ নিয়ে পৌষমেলা না করার জন্য উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর প্রতি একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন মঞ্চে উপস্থিত সকলেই।

ঠাকুর পরিবারের সদস্য প্রবীন আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “পৌষমেলা শুধু নয়, একে একে সব বন্ধ হয়ে যাবে। যে ভাবে চলছে সেভাবে চলতে পারে না” অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশ্বভারতীর প্রাক্তন দুই উপাচার্যের মধ্যে অন্যতম সুশান্ত দত্তগুপ্ত বলেন, “আমি রবীন্দ্রনাথের গানের কথায় বলছি, ‘তোমরা যা বলো তাই বলো আমার লাগে না মনে।”
অপর প্রাক্তন উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, “আমার আশঙ্কা বিশ্বভারতীতে আর মনে হয় না পৌষমেলা, বসন্তোৎসব হবে কিনা৷ উপাচার্যের কোনো বক্তব্যে প্রসঙ্গে কিছু বলতে আমার রুচিতে বাঁধে।”
অন্যদিকে, ঐতিহ্য ও প্রথা মেনে শুরু হল পৌষ উৎসব। ভোর পাঁচটায় বৈতালিকের মাধ্যমে শুরু হয় পৌষ উৎসবের শুভ সূচনা। পরে সকাল সাতটায় ছাতিমতলায় ব্রহ্ম উপাসনা, বৈদিক মন্ত্রপাঠ, রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্যদিয়ে শুরু হল ৩ দিনের পৌষ উৎসব।

