TTribal, Robin, এবার তৃণমূল নেতা রবিন সোরেনকে বীরভূম ছাড়া করার হুমকি আদিবাসীদের

আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ৯ অক্টোবর: ছাত্রী খুনে এবার তৃণমূল নেতা রবিন সোরেনের ভূমিকা নিয়ে গর্জে উঠলেন বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন। প্রকাশ্যে মাইক হাতে তাকে কুলাঙ্গার বলে কটাক্ষ করেন আদিবাসী সংগঠনের নেতারা। সেই সঙ্গে শিক্ষকের ফাঁসি চেয়ে সাক্ষর সংগ্রহ করেন। আগামী দিনে এই ইস্যুতে নবান্ন অভিযানের হুঁশিয়ারি দেয় আদিবাসী সংগঠনগুলি।

প্রসঙ্গত, ২৮ আগস্ট গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি শ্যামপাহাড়ি শ্রী রামকৃষ্ণ শিক্ষাপীঠের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী বাহা কিষ্কু। পরিবারের পক্ষ থেকে রামপুরহাট থানায় নিখোঁজ অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু ১৯ দিন ধরে তার খোঁজ মেলেনি। এরপর পরিবার গোপনভাবে জানতে পারে শ্যামপাহাড়ি শ্রী রামকৃষ্ণ শিক্ষাপীঠের ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক মনোজ কুমার পাল মেয়েকে অপহরণ করেছে। বিষয়টি পুলিশে জানালে রামপুরহাট থানার পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করে। ১৬ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে রামপুরহাট থানার কালিডাঙ্গা গ্রামের কাছে সেচখাল থেকে তার পচা গলা মৃতদেহের একাংশ উদ্ধার করে রামপুরহাট থানার পুলিশ। এখনও কোমরের নিচের অংশ এবং দুটি পায়ের খোঁজ মেলেনি। তারই মধ্যে তড়িঘড়ি ২৬ সেপ্টেম্বর খুনের চার্জশিট জমা দেওয়া হয় রামপুরহাট মহকুমা আদালতে। শুধুমাত্র শিক্ষক মনোজ কুমার পালকেই অভিযুক্ত হিসাবে চার্জশিটে নাম দেওয়া হয়।

এদিকে ছাত্রী খুনে দোষীদের ফাঁসির দাবিতে আদিবাসীদের মিছিল বের হয় রামপুরহাটে। সপ্তাহের ব্যস্ততম দিনে হাজার হাজার আদিবাসীদের মিছিলে স্তব্ধ হয়ে পড়ে রামপুরহাট শহর। মিছিল চলাকালীন চলে গণস্বাক্ষর। গণ স্বাক্ষর পাঠানো হবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। বিচার না পেলে নবান্ন অভিযানের হুমকি দিয়েছেন আদিবাসী সংগঠনের নেতারা। তীর- ধনুক সহ বিভিন্ন অস্ত্র হাতে নিয়ে ও ধামসা মাদল বাজিয়ে মিছিল করে তারা। এদিনের মিছিলে রাজ্যের বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনের প্রায় ৫০০০ হাজারেরও বেশি সদস্যরা মিছিলে অংশ নেন। তাদের দাবি আদিবাসী নাবালিকা ছাত্রীকে খুনে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে ফাঁসি দিতে হবে।

এদিকে খুনের ঘটনার পর পুলিশের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে ছাত্রীর মা- বাবার একটি ভিডিও বার্তা নিয়ে গর্জে ওঠেন আন্দোলনরত আদিবাসীরা। তাদের দাবি, তৃণমূল নেতা রবিন সোরেন ভয় দেখিয়ে ওই কথা বলিয়ে নিয়েছে ছাত্রীর বাবা- মা’য়ের কাছে থেকে। প্রকাশ্যে মাইক হাতে তাকে বীরভূম ছাড়া করার হুমকি দেন আদিবাসী নেতারা। যদিও বার বার রবিন সোরেনকে ফোন করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী অধিকার মঞ্চের সম্পাদক পুলীন বিহারী বাস্কে বলেন, “এখনও পর্যন্ত পুলিশ ছাত্রীর দেহের একাংশ উদ্ধার করতে পারেনি। ফলে আমাদের মনে পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আমরা চাই অবিলম্বে অভিযুক্ত শিক্ষকের ফাঁসি দিতে হবে। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষককে শাসক দলের যারা থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছিল তাদেরও শাস্তি দিতে হবে। আমরা বিচার না পেলে নবান্ন ঘেরাও করে পুলিশ মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করব। আগামী ১৫ অক্টোবর জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইব। তাতেও সন্তুষ্ট না হলে আদিবাসীদের নিয়ে রাজপথে হাঁটব।”

তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি মনে হচ্ছে। যাদের মেয়ে মারা গিয়েছে তারা পুলিশের কাজে খুশি। অথচ কিছু আদিবাসী সংগঠন ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে বীরভূমকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *