আমাদের ভারত, ১৮ জানুয়ারি: ভোট পরবর্তী অশান্তির মামলায় রাজ্য পুলিশের ডিজিকে তলব করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সেই সঙ্গেই বুধবার তাদের নির্দেশ মেনে কমিশনের কাছে ‘একশন টেকেন’ রিপোর্ট জমা না দেওয়ায় কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে হুঁশিয়ারি দিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
পুলিশ কমিশনারকে ফের ৪ সপ্তাহ সময় দিয়ে এর মধ্যে একশন টেকেন রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। ৪ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট না পেলে কমিশন হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তাহলে প্রোটেকশন অব হিউম্যান রাইটস ১৯৯২ আইনের ১৩ ধারা প্রয়োগ করে তাকে দিল্লিতে কমিশনের অফিসে যেতে বাধ্য করা হবে।
বুধবার এপিডিআর-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর এখবর জানিয়ে বলেন, “জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাম্প্রতিক ইতিহাসে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে কোনো দিন এই ভাষায় কেউ চিঠি লেখেনি। পুলিশ কমিশনারকে মানবাধিকার কমিশন বলেছে, কমিশনকে তাকে আইন প্রয়োগ করে জবরদস্তি দিল্লি নিয়ে যাবে। সেখানে কমিশনের সামনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে তাকে বক্তব্য জানাতে হবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কেন এত ক্ষুব্ধ হ’ল কলকাতার পুলিশ কমিশনারের উপর? ঘটনা হচ্ছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর এবং ১৩ অক্টোবর কলকাতার রাজাবাজার মোড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনার প্রতিবাদে পথসভা করতে চেয়েছিল মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। নিয়মমত পুলিশকে জানিয়েই। পুলিশ কোনো আপত্তি জানায়নি। কিন্তু ঘটনা হল ২৯ সেপ্টেম্বর মিটিংয়ের জন্য জমায়েত হতেই পুলিশ এপিডিআর কর্মীদের গ্রেপ্তার করে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় নিয়ে যায়। রাত পর্যন্ত আটকে রেখে ছেড়ে দেয়।
একই রকম ভাবে ১০ অক্টোবরও এপিডিআর- এর সভা পুলিশ ভেস্তে দেয়। অথচ ওই এলাকায় কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। ১৪৪ ধারা ছিল না। এইভাবে এপিডিআর কর্মীদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরনের বিরুদ্ধে এবং পুলিশের এরকম অসাংবিধানিক, বে-আইনি আচরণের বিচার চেয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানায় এপিডিআর।
মানবাধিকার কমিশন ৩১/১০ তারিখে কলকাতার পুলিশ কমিশনার ও ডিজি’কে চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগের জবাব দিতে এবং এব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চায়। পুলিশ কমিশনার বা ডিজি মানবাধিকার কমিশনের চিঠির কোনো জবাবই দেয় না। কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা তাও কমিশনকে জানায় না। এতেই চরম ক্ষুব্ধ হয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তারা মানবাধিকার আইনের ১৩ নং ধারা স্মরণ করিয়ে ডিজি ও পুলিশ কমিশনারকে নোটিস পাঠিয়েছেন। ১৩ নং ধারা হ’ল ‘পাওয়ার অফ কমিশন’ সংক্রান্ত। বলা হয়েছে কমিশনের সিভিল কোর্টের মত ক্ষমতা আছে। কমিশন যে কাউকে ডেকে পাঠাতে পারে। সে ক্ষেত্রে তার হাজিরা বাধ্যতামূলক।
এপিডিআর এর অভিযোগ নিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে বলা হয়েছে। ১৭ জানুয়ারি থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে জবাব না পেলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে পুলিশ কমিশনারকে দিল্লিতে হাজির হয়ে বক্তব্য জানাতে বাধ্য করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ১৭ জানুয়ারি ই-মেইল চিঠি পাঠিয়ে রাজ্যের ডিজি পুলিশকেও সমগ্র বিষয়টি জানানো হয়েছে। চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে অভিযোগকারি সংগঠন এপিডিআর-কেও।“
প্রসঙ্গত, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিজি’কে দিল্লিতে হাজির হতে বলেছে বলে জানা গিয়েছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর ভাঙড়ে আইএসএফ কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে। আইএসএফ কর্মীদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হয় তারা। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই দিল্লিতে রাজ্য পুলিশের ডিজিপিকে তলব করা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি।