এবার রোশনাই হীন চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো

আমাদের ভারত, হুগলী, ১৮ নভেম্বর: করোনা আবহে আলোর শহর চন্দননগরে এবার অন্ধকারের ছায়া।করোনার প্রকোপে পৃথিবী বিখ্যাত চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো এবার হতে চলেছে অনেকটা সাদামাটা ভাবেই।বেশকিছু পুজো কমিটি নিয়ম মেনে বড় প্রতিমা করে পুজো করলেও থাকছে না তেমন জাঁকজমক। আবার এই বছর বহু পুজো কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার তাদের পুজো হবে শুধু ঘট পুজোর মাধ্যমে।

চন্দননগরের ফটোকগোড়া পুজো কমিটি এবার ঘট পুজো করলেও নিয়েছে অভিনব উদ্যোগ। ঘট পুজো করে পুজোর বাজেট কমিয়ে তাদের পুজোর বাজেটের টাকা মৃৎশিল্পী, আলোকশিল্পী, ঢাকি সহ অন্যান্যদের মধ্যে ভাগ করে দিচ্ছে। করোনা আবহে যখন সমস্ত শিল্পের সাথে জড়িত মানুষদের অসহায় অবস্থা সেই পরিস্থিতিতে ফটোকগোড়া পুজো কমিটির এই অভিনব উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে মানুষের।
অপরদিকে তেমাথা পুজো কমিটি, দৈবকপাড়া পুজো কমিটি সহ অন্যান্য বড় পুজো কমিটিগুলির পুজোয় প্রতিমা বড় হলেও জাঁকজমক থাকছে না। তাই চন্দননগরের পুজোর সঙ্গে জড়িত বহু মানুষের রুটিরুজিতে টান পড়ছে।করোনার কোপ চন্দননগরের আলোক শিল্পে পড়েছিল অনেক আগেই। অনেক পুজো বাতিল অথবা ছোট হওয়ায় আলোক শিল্পের চাহিদা তলানিতে এসে ঠেকছিল।

চন্দননগরের আলোকশিল্পীরা, সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন যে পুজোটিকে কেন্দ্র করে তা হলো এখানকারই জগদ্ধাত্রী পুজো। এই জগদ্ধাত্রী পুজোতেই তারা তাদের শ্রেষ্ট আলোর কারসাজি তুলে ধরে শোভাযাত্রায়। আর সেই আলো দেখেই আকৃষ্ট হয় পুজো উদ্যোক্তারা। পরের বছর পুজোর জন্য বায়না শুরু হয়ে যায় এই পূজার পর থেকেই।করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় লকডাউন। চায়না থেকে সস্তার এল ই ডি বাল্ব আসা বন্ধ হয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই নতুন আলো তৈরি করা অনেকটাই পিছিয়ে যায়। আনলক পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকে এখানকার শিল্পীরা আশায় বুক বেঁধেছিল, কিন্তু দুর্গা পুজোয় সেই আশায় অনেকটাই ব্যাঘাত ঘটেছিল কোর্টের অর্ডারে, আর সেখান থেকেই পুরোপুরি অন্ধকার নেমে এলো জগদ্ধাত্রী পুজোয়। কারন প্রশাসনের নির্দেশে এবার বাতিল হচ্ছে ঐতিহ্যের শোভাযাত্রা। স্বাভাবিক ভাবেই, আলোর রোশনাইও থাকছে না এবার পুজোয়। তাই বলা যেতেই পারে, এই বছরের পূজার শেষ আলোটিও নিভে গেল চন্দননগরে। যে কয়টি পুজো হচ্ছে, তাদেরকে মানতে হবে সরকারি নিয়ম, কোর্টের আদেশ।

ভিড় যাতে না হয়, সেই বিষয়টিও লক্ষ রাখতে হবে সকলকে। আর সেই দিকটাই ভেবে সমস্ত পুজো উদ্যোক্তারা পুজোর সমস্ত কিছুই বাতিল করে সাদামাটা ভাবে পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। থাকছে না মন্ডপের কোনো কারুকার্য। বাতিল হয়েছে আলোর ঝলকানি। শুধুমাত্র ঐতিহ্যের প্রতিমাই পূজিত হবে মণ্ডপে মণ্ডপে। হাজার হাজার আলোকশিল্পী চলে গেছেন পুরোপুরি অন্ধকারে। শুধু আলোকশিল্পীরাই নয় সমস্যায় পড়েছেন পুজোর সময়ে কিছু রোজগারের আশায় থাকা ছোট বড় ব্যবসায়ীরাও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *