স্বরূপ দত্ত, উত্তর দিনাজপুর, ২৩ আগস্ট: গ্রামগঞ্জে কাজ না থাকায় আবার ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। শ্রমিকদের বক্তব্য, সংসার বাঁচাতেই তারা আবার ভিন রাজ্যে কাজের জন্য চলে যাচ্ছেন। রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি মানস ঘোষের দাবি ভিন রাজ্যে বাড়তি উপার্জনের জন্যই তাঁরা আবার চলে যাচ্ছেন।দিল্লি, মুম্বাই, হরিয়ানার মালিকরা গাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে শ্রমিকদের নিয়ে যাচ্ছেন। কোনভাবেই এই শ্রমিকদের বাইরে যাওয়া আটকনো যাচ্ছে না।
উত্তর দিনাজপুর জেলা থেকে হাজার হাজার শ্রমিক দিল্লি, মুম্বাই, হরিয়ানা, রাজস্থানে কাজের জন্য যায়। কেউ রাজমিস্ত্রী, কেউ লেবার, কেউ আবার বিভিন্ন শিল্পের কাজে যুক্ত হন। উত্তর দিনাজপুর জেলার কত বাসিন্দা ভিন রাজ্যে কাজের জন্য গিয়েছেন তার কোনও তথ্যই জেলা প্রশাসন বা জেলা শ্রম দপ্তরের কাছে ছিল না। করোনা ভাইরাস ঠেকাতে কেন্দ্রীয় সরকার দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষনা করেছিল। লকডাউনের ফলে দেশ জুড়ে সমস্ত কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কাজ হারায় হাজার হাজার এরাজ্যের বাসিন্দা।জীবন বাঁচাতে এই লকডাউন চলাকালীন হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক কেউ হেঁটে, কেউ লরিতে চরম কষ্ট করে ভিন রাজ্য থেকে এই জেলায় ফিরে এসেছিল।
পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সরকার কয়েক’শ ট্রেন চালিয়ে ভিন রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের নিয়ে এসেছিল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ১০০ দিনের প্রকল্পে এই শ্রমিকদের যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এছাড়াও তাদের জন্য রেশনে মাসে ১০ কেজি চাল দেবার নির্দেশ দিয়েছিলেন।রমুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের ১০০ দিনের প্রকল্পে যুক্ত করার নির্দেশ দিলেও অধিকাংশ শ্রমিক এই প্রকল্পের আওতার বাইরেই থেকে গেছে।
হাজার হাজার বাসিন্দা কাজ না পেয়ে চরম কষ্টের মধ্যে দিন গুজরান করছিল। পরিবারে ছেলে মেয়ের মুখে দুমোঠো অন্য তুলে দিতে আবার তারা ভিন রাজ্যে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভিন রাজ্যে যে যেখানে কাজ করতেন সেখানকার মালিকদের সংগে যোগাযোগ করছেন। তারাই এই শ্রমিকদের নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করছেন।

রায়গঞ্জ ব্লকের বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের লহুজ গ্রামে এই চিত্র ধরা পড়ল। শ্রমিকদের নিয়ে যাবার জন্য দিল্লি থেকে বাস এসেছে। এই বাসে প্রায় ৩৫ জন গ্রামবাসী শ্রমিকের কাজ করতে দিল্লি যাচ্ছেন। কোনও রকম রাকঢাক করে নয়, প্রকাশ্যে তারা জানাছেন সংসারের জন্য তাদের ভিন রাজ্যে কাজে যেতে হচ্ছে। লকডাউনের মাঝে চরম কষ্টের মধে রায়গঞ্জে এলেও দীর্ঘদিন তারা কর্মহীন হয়ে আছেন।পঞ্চায়েত থেকে তাদের দুদিনের কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বাকি দিনগুলো বসেবসেই কাটাতে হচ্ছে।উপার্জন না হবার কারনে পরিবারের সদস্যরা অনাহার অর্ধাহারের দিন কাটাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যদের মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি মানস ঘোষ জানিয়েছেন, ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করলে তাদের ২০০ টাকা দেওয়া হয়। ভিন রাজ্যে সকাল /সন্ধ্যা দুই সিফটে কাজ করলে তারা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা উপার্জন করেন।এই অধিক আয়ের জন্যই ভিনরাজ্যে যাবার হিড়িক পড়ে গেছে।

