ডাকাতির লুটপাটের অর্থ দিয়েই শুরু মাজদিয়ায় ডাকাতে কালীর পুজো

স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদীয়া, ৮ নভেম্বর:
একসময় ডাকাতি করার আগে ডাকাতরা এই গভীর জঙ্গলে কালী পুজো করে ডাকাতি করতে যেত। তাদের বিশ্বাস ছিল ডাকাতি করার আগে যদি মাকে পুজো দেওয়া হয় তাহলে মা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন এবং তাদের সকল কাজ সফল হবে। তখন থেকে আজও এখানে এই কালীপুজো চলে আসছে। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের মাজদিয়া নতুনপাড়ার ডাকাতে কালী। সেই থেকেই ওই পাড়ার নাম ডাকাতে কালী পাড়া। অমাবস্যার মধ্যে পাটায় তোলার পর হয় চক্ষুদান।

ডাকাতে কালী প্রতিমার মূর্তি তৈরি করতে কেউ দেন বাঁশ, কেউ বিচুলি, কেউ মাটি এভাবেই তৈরি হয় ডাকাত কালী মা। সারারাত চলে পুজো, শেষ হয় ভোর রাতে। স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা গোষ্ঠ তরফদার জানান, ওই এলাকা এক সময় ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। ব্রিটিশদের অত্যাচারে এলাকার গ্রামবাসীদের ঠিকঠাক খাবার জুটত না। সেইসময় কৃত্তিবাস মৈত্র, দুলাল পাটনি, কালি ঘোষরা ডাকাতি করত। ডাকাতির অর্থ গরিব গ্রামবাসীদের মধ্যে বিলি করে দিত। গ্রামবাসীরা ওদেরকে ভগবানের মত দেখতেন। তিনি জানান, তারা বড় ডাকাতি করলে সেই প্রচুর ধন দৌলত ওই জঙ্গলে রেখে দিত। ওদের বিশ্বাস কালীমা ওদেরকে রক্ষা করতে পারেন। ওরা ওই জঙ্গলের মধ্যে পুজো শুরু করল বলেই কালীর নাম ডাকাতে কালী। তিনি বলেন, গ্রামবাসীদের কাছে এই ডাকাতে কালী তাদের রক্ষাকর্তা। সেজন্য এই দেবীর কাছে গ্রামের মানুষজন মানত করেন। মনোবাসনা পূরণ হলে কেউ মন্দিরে দন্ডী কাটেন, কেউ সম ওজনে বাতাস, কেউবা পাঁঠা বলি দেন।

পুজোর পরের দিন সমস্ত গ্রামবাসী এক সঙ্গে বসে মায়ের খিচুড়ি প্রসাদ খান। আর এই প্রসাদের জন্য চাল ডাল অর্থাৎ পুজোর ভোগ কোনও না কোনও ভক্ত মন্দিরে পাঠিয়ে দেন। স্থানীয় বাসিন্দা সমীর দত্ত জানান, কোন চাঁদা তোলা হয় না। এখন কোনও বনজঙ্গল নেই, ভক্তদের দানে তৈরি হয়েছে ডাকাতে কালীমার মন্দির। এই পুজোর খরচ ভক্তরা বহন করেন। এমনকি কে কি দেবেন তার লিস্ট করে রাখতে হয়। সমীরবাবু বলেন, ডাকাতে মা কালীর বিসর্জন পর্ব বিশেষ কিছু নিয়ম আজও চলে আসছে। কোনও আলো নয় প্রচুর সংখ্যক ঢাক সহকারে কাঁধে করে বিসর্জনে নিয়ে যাওয়া হয়। হাজার হাজার গ্রামবাসী অংশ নেন এই বিসর্জনে। তবে কিছু নির্ধারিত বাড়ি থেকে নিয়ম মেনে জল বাতাসা ভোগ দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *