আমাদের ভারত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ৫ ফেব্রুয়ারি:
বানতলা চর্মনগরীর নিকাশী নালার ম্যানহোলে রঙ করতে গিয়ে মৃত্যু হল এক শ্রমিকের।ঘটনায় আশঙ্কাজনক আরও দুই শ্রমিককে ভর্তি করা হয়েছে স্থানীয় এক নার্সিংহোমে। মৃত শ্রমিকের নাম সাহিন গাজী(২০)। বাড়ি মিনাখা থানার কুমারজোল গ্রামে। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে চর্মনগরীর তিন গেট থেকে খানিকটা দূরে চর্মনগীরর ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের সামনে। মৃত শ্রমিকের দেহ উদ্ধার করতে বেশ বেগ পেতে হয় পুলিশ ও দমকল বাহিনীকে। শেষে পে লোডার নিয়ে এসে ম্যানহোল ও নিকাশী নালার পাইপ ভেঙ্গে মৃত শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি জখম দুই শ্রমিককে সংঞ্জাহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় তদারকির অভাব এবং বিধিনিষেধ না মানার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, চর্মনগরীর পুরনো ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পাশে একটি নতুন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করছে কেএমডিএ। মূলত বিভিন্ন কারখানার চামড়া পরিশোধনের বর্জ্য জল পাইপ লাইনের মাধ্যমে ওই প্ল্যান্টে জমা হবে, এবং সেখান থেকে পরিশোধিত জল আবার কারখানায় চামড়া পরিশোধনের কাজে ব্যবহার করা হবে। সেই কাজের জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই ভূ-গর্ভস্থ পাইপ লাইনের কাজ চলছে ওই এলাকায়। এদিন পাইপ লাইনের সঙ্গে যুক্ত ম্যানহোল গুলিতে রঙ করার কাজ করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। সিইটিপির মূল গেটের বাইরে ম্যানহোলে নেমে রঙ করার সময় রঙ এবং পাইপ লাইনে জমে থাকা চামড়া পচা জলের বিষাক্ত গন্ধে সাবির কয়াল ও নাসির মোল্লা নামে দুই শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাঁরা ওপরে ওঠার জন্য চিৎকার শুরু করলে বছর কুড়ির সাইন গাজী চিৎকার করতে করতে ম্যানহোলের ভিতর নেমে যান। সাবির ও নাসির ওপরে উঠে এলেও বিষাক্ত গন্ধে সংঞ্জাহীন হয়ে পড়েন সাহিন গাজী। পাইপের মধ্যে তিনি পড়ে যান। অন্য শ্রমিকরা চেষ্টা করেও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। এরপর খবর দেওয়া হয় দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরে।হাজির হয় লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশও। কাছ থেকে ডেকে আনা হয় একটি পে লোডারও। সেই পে লোডার দিয়ে পাইল লাইন বরাবর মাটি খুঁড়ে একটি বড় গর্ত করা হয়। পাইল লাইন ও ম্যানহোল ভেঙ্গে উদ্ধার করা হয় সাহিনকে। সংঞ্জাহীন সাহিনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
কর্মরত শ্রমিকদের দাবি, এদিন ঝুঁকিবহুল ম্যানহোলে কাজ করলেও শ্রমিদের জন্য নূন্যতম নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। ম্যানহোলে কাজ করতে গেলে মাস্ক, অক্সিজেন এবং সেফটি বেল্ট সহ যে ধরনের সরঞ্জাম সঙ্গে নেওয়া দরকার তার কিছুই ছিল না নিহত শ্রমিকের। ফলে কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে শ্রমিকদের এদকাংশ দাবি করেছেন। মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশ।