Bharatiya Kisan Sangha, শেষ হল ভারতীয় কিষাণ সংঘের পশ্চিমবঙ্গ প্রান্ত অধিবেশন

পারুল খামারিয়া, আমাদের ভারত, জলপাইগুড়ি, ২০ অক্টোবর: ‘ভারতীয় কিষাণ সংঘ’-এর পক্ষ থেকে আয়োজিত দু-দিন ধরে চলা (১৯ ও ২০ অক্টোবর) ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রান্ত অধিবেশন’ শেষ হল আজ। এই অধিবেশন আয়োজিত হয় জলপাইগুড়ি জেলার মাষকলাইবাড়ির ‘সারদা শিশু মন্দির’-এ। এই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় কিষাণ সংঘের অখিল ভারতীয় সংগঠন মন্ত্রী দীনেশ কুলকার্নি, উত্তর ও উত্তর পূর্ব ক্ষেত্রের সংগঠন মন্ত্রী শ্রীনিবাস ও পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সংগঠন মন্ত্রী অনিল রায় এবং অখিল ভারতীয় প্রান্ত কার্য কারিণী সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সভাপতি কল্যাণ কুমার মন্ডল ও অন্যান্য কার্যকর্তারা।

গতকাল, ১৯ শে অক্টোবর ভারতীয় কিষাণ সংঘের পতাকা উত্তোলন ও প্রদীপ প্রজ্জলনের মধ্যে দিয়ে অধিবেশনের শুভ সূচনা হয়। পতাকা উত্তোলন করেন প্রান্ত সভাপতি কল্যাণ কুমার মন্ডল।

এই অধিবেশনে কিষাণ সংঘের সাংগঠনিক দিক নিয়ে আলোচনা করেন শ্রী মন্ডল। তারপর কিষাণ সংঘের সদস্যতা অভিযানের গুরুত্ব ও জনসংযোগ নিয়ে আলোচনা করেন প্রান্তের সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ পাহাড়ি। বর্তমানে কত সদস্য হয়েছে সেই নিয়ে আলোচনা করেন অনিল রায়। তিনি জানান যে, এখনো পর্যন্ত ২৫০০০-এর অধিক সদস্য পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় কিষাণ সংঘের হয়েছে। গত ৩ বছর আগে ছিল ২১০০০ এর অধিক সদস্য। তার থেকে এবছর- ৪০০০ এর অধিক সদস্য বেড়েছে। আগামী দিনে ভারতীয় কিষাণ সংঘের কাজ এরাজ্যে আরও বাড়বে বলে তিনি জানান।

এরপর শ্রীনিবাস বলেন, “রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ পাঁচটি বিষয় নিয়ে বর্তমানে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সামাজিক সমরসতা অর্থাৎ সমাজের মানুষের মধ্যে বিভেদ মেটানো, কুটুম্ব প্রবোধন অর্থাৎ পরিবার রক্ষা ও নিজের সংস্কৃতি রক্ষা, পর্যাবরণ অর্থাৎ পশু-পাখিদের রক্ষা ক’রে সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখা, স্বাধিমান অর্থাৎ নিজের সংস্কৃতি ও পোশাক-পরিচ্ছদ রক্ষা করা এবং অনুশাসন অর্থাৎ নাগরিক কর্তব্যের মাধ্যমে সুন্দর সমাজ গঠন। যতদিন পর্যন্ত সমাজে সার্বিক সাম্যাবস্থা ও প্রাকৃতিক স্থিতিশীলতা না আসবে ততদিন এই পাঁচ বিষয় নিয়ে কাজ করে যাবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। ভারতীয় কিষাণ সংঘও সমাজে সেই আদর্শ স্থাপনে যেন জোর দেয়, সেই বিষয়ে আমি কিষাণ সংঘের কার্যকর্তাদের কাছে অনুরোধ করছি।”

শ্রী কুলকার্নি বলেন, “ভারতীয় কিষাণ সংঘ তার নীতিগত জায়গায় অরাজনৈতিক ভাবে কাজ করে চলেছে। সমাজে কৃষকদের জন্য অনেক সংগঠন আছে। কিন্তু তারা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জড়িয়ে যাবার জন্য সেই সংগঠন তার লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় কিষাণ সংঘ শুধুই কৃষকদের জীবনের সার্বিক উন্নতি করার জন্য কাজ করে চলেছে। আমরা কৃষকদের ফসলের লাভকারী মূল্যের দাবিতে আন্দোলন করছি অনেক বছর ধরে। কৃষকদের দ্বারা ও কৃষকদের জন্যই এই সংগঠন তৈরি হয়েছিল ১৯৭৯ সালের ৪ ঠা মার্চ। আজ আমাদের সদস্য সংখ্যা সারা ভারতে ৪২ লক্ষে পৌঁছে গেছে। কৃষকদের পাশে থাকার জন্যই আমাদের সংগঠনের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে।”

দু-দিনের এই অধিবেশনে ২০২৪-২৭ সাল অর্থাৎ আগামী ৩ বছরের জন্য নতুন সমিতি গঠিত হয়। নতুন সমিতিতে সভাপতি নির্বাচিত হন অনিমেষ পাহাড়ি, সহ-সভাপতি – প্যারিচাঁদ ঘোরাই, পঙ্কজ কুমার বন্ধু ও পার্বতী সোলাঙ্কি; সাধারণ সম্পাদক আশিস সরকার, সম্পাদক- কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাস, ড: কল্যাণ জানা ও উৎপল কুন্ডু; সংগঠন সম্পাদক( রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ-এর প্রচারক) অনিল রায়, কোষাধ্যক্ষ অষ্টগোপাল পাল, কার্যালয় প্রমুখ প্রসেনজিৎ নাথ, মহিলা প্রমুখ ড: অলি ব্যানার্জি, জৈব প্রমুখ ব্যোমকেশ রায়, যুব প্রমুখ গুপ্তেশ্বর চৌধুরী এবং প্রচার প্রমুখ ও ‘ভারতীয় কিষাণ বার্তা’ পত্রিকার সম্পাদক মিলন খামারিয়া। এছাড়া আরও ৬ জন কার্যকারিনী সদস্য মিলিয়ে মোট ২১ জনের নতুন সমিতি গঠিত হয়।

নব নির্বাচিত সভাপতি অনিমেষ পাহাড়ী জানান যে,”এই নতুন প্রান্ত সমিতি কৃষকদের অধিকার পাইয়ে দেবার জন্য লড়াই করবে। একটি সুন্দর রাষ্ট্র গঠন করার জন্য কৃষকদের অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়া ভীষণ প্রয়োজন।”

নতুন সাধারণ সম্পাদক আশিস সরকার জানান,
“পরম পরাগত জৈব কৃষিকে ফিরিয়ে এনে কৃষকদের লাভকারী মূল্য পাইয়ে দেবার জন্য ভারতীয় কিষাণ সংঘ যে লড়াই শুরু করেছিল, ভগবান বলরামের নাম নিয়ে আমরা সেই লড়াই জারি রাখব। কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের লাভকারী মূল্য পাইয়ে দিতে ভারতীয় কিষাণ সংঘ বদ্ধ পরিকর। সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাকে বাস্তবায়িত করতে চাই আমরা।”

এই অধিবেশনে ‘ভারতীয় কিষাণ বার্তা’ পত্রিকার ষষ্ঠ সংখ্যার উন্মোচন করা হয়। রাস্তায় কৃষকরা শোভাযাত্রা বের করেন। দু-দিনের এই অধিবেশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল ভারতীয় কিষাণ সংঘের জলপাইগুড়ি জেলা সমিতির কার্যকর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *