আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ২৯ জুন: রাজ্যের একমাত্র শকুন প্রজনন কেন্দ্র রাজাভাতখাওয়া থেকে খোলা আকাশে ৬টি শকুনকে মুক্ত করবার মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই আশার কথা শোনা গেল বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন বক্সা বাঘ বনে আবার ফিরে আসছে শকুনের দল। বনাধিকারিদের থেকে চমকপ্রদ দুটি তথ্য উঠে এসেছে রবিবার।
জানা গেছে, সিনোরিয়াস ভালচার এবছর এখন পর্যন্ত দুবার দেখা গেছে বক্সা বাঘ বনে। আবার ১৭ই ডিসেম্বর যে ৬টি ক্যাপটিভ হিমালয়ান গ্রিফনকে ট্রান্সমিটার পরিয়ে বক্সার রাজাভাতখাওয়া থেকে ছাড়া হয়েছিল সেই সবকটি শকুন ইতিমধ্যেই জঙ্গলের স্বাভাবিক পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। কমবেশি ৩০০বর্গমিটার এলাকা জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৬টি শকুন। ঘটনাটিকে শুধু তাৎপর্যপুর্নই নয়, গবেষকদের মতে রাজাভাতখাওয়াতে গত ১৫ বছর ধরে শকুন নিয়ে যে গবেষণা, সংরক্ষণের কাজ চলছিল তা যে সঠিক পথেই ছিল তাও সিংহভাগ প্রমাণিত।
এরই পাশাপাশি রবিবার এও জানা গেছে, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের এক্কেবারে কোর এলাকায় যে খোলা ময়দান রয়েছে, সেখানে এখন স্বাভাবিকভাবে মৃত সম্বর, বাইসনদের দেহ ফেলে রাখা হচ্ছে। গত কয়েকমাসে দেখা প্রচুর হিমালয়ান গ্রিফন প্রজাতির শকুন পাহাড়ের উচু অংশ থেকে নিচে নেমে আসছে। সংখ্যায় কখনো কখনো তা ৫০ থেকে ১০০ টি থাকছে। খুব কাছ থেকে তাদের পর্যবেক্ষণ সম্ভব হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর সংসদে জানিয়েছিলেন দেশে ৯৯ শতাংশ শকুন অবলুপ্ত হয়ে গেছে। শকুনদের ফিরিয়ে আনতে রাজাভাতখাওয়া সহ দেশে ৮টি বিশেষ কেন্দ্র রয়েছে। যার মধ্যে রাজাভাতখাওয়া থেকেই দেশে প্রথমবার প্ল্যাটফর্ম ট্যান্সমিটার টার্মিনাল বা পিটিটি পরিয়ে ৬টি আবাসিক হিমালয়ান গ্রিফনকে প্রকৃতির বুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন বনমন্ত্রী রাজিব ব্যানার্জি নিজেও।
উল্লেক্ষ্য, দেশে যে ৯টি প্রজাতির শকুনের দেখা মেলে তারা সকলেই আজ বিপদে। এই শকুনকুলকে বাঁচাতে রাজাভাতখাওয়াতে ৫ একর জমির উপর তৈরি রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্রটিতে বনদপ্তরের সহযোগিতায় মূল গবেষণার কাজ করে যাচ্ছেন বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোস্যাইটির গবেষকেরা। এদিকে, প্রথম দফার পর দ্বিতীয় দফায় আর ৮টি আবাসিক শকুন প্রকৃতির বুকে রাজাভাতখাওয়া থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে শীতকালে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধীকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, “শকুনদের প্রকৃতির বুকে আবার আগের মত ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি আমরা। এখনো পর্যন্ত আমরা অনেকটাই সফল হয়েছি।”
বনমন্ত্রী রাজিব ব্যানার্জি বলেন, “১৭ ডিসেম্বর একটা অনবদ্য ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলাম। শকুনদের আগের মত প্রকৃতির বুকে দেখতে চাই আমরা। তবে চ্যালেঞ্জটা যথেষ্টই কঠিন। মানুষকে সচেতন হতে হবে। ডাইক্লোফেনাক বা ঐজাতীয় ওষুধের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে গৃহপালিত পশুর উপর।”
এদিকে, শকুনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা স্বাভাবিকভাবে যথেষ্টই কঠিন। একবছরে শুধুমাত্র একটি বা দুটি ডিম পাড়ে শকুন। ধীরে ধীরে সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তবে বাঘ বনের ভেতর স্বাভাবিক পরিবেশে বা গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়েই পরিবেশে ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধের ব্যবহার না থাকলে, বিষাক্ত কিছু শকুনের সংস্পর্শে না এলে চার পাঁচ প্রজাতির শকুন ভালো সংখ্যায় ফিরে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।