কয়েক ঘন্টার প্রবল বর্ষণে জলমগ্ন বড়জোড়ার গ্ৰাম

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৯ আগস্ট: তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় বাঁকুড়া জেলা জুড়ে যেখানে খরার পরিস্থিতি তৈরী হয় গতকাল রাতে আচমকা বৃষ্টিতে পরিস্হিতি পাল্টে জলমগ্ন হয়ে পড়ল বড়জোড়ার বেশ কয়েকটি গ্ৰাম।

গতকাল রাতে আচমকাই বৃষ্টি নামে বড়জোড়ায়।
বর্ষার শুরু থেকে বাঁকুড়ায় তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গোটা জেলার মাটি প্রায় ফুটিফাটা হয়ে রয়েছে। ফলে কৃষকের মাঠ বন্ধা অবস্থায় পড়ে আছে। গোটা জেলাজুড়েই খরার মতো পরিস্থিতি। এরই মাঝে বৃহস্পতিবার মাঝ রাতে আচমকা মেঘ ভাঙা বৃষ্টি শুরু হয়। ঘন্টা দেড়েকের প্রবল বর্ষণে মাঠ ঘাট, পুকুর ডোবা, নদী নালা, সব যেন ফুঁসে উঠলো উত্তর বাঁকুড়ার শিল্পাঞ্চল বড়জোড়ায়।এরই মধ্যে বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এই ব্লকের চুনপোড়া গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির ভিতরে হাঁটু সমান জল। গ্রামের রাস্তায় কোমর অবধি জল বইছে। পাশাপাশি ভিড়কাশোল, শালগাড়া, প্রতাপপুর, জমাদার গ্রাম, ভৈরবপুর, কৃষ্ণনগর গ্রাম গুলিতে জল ঢুকছে হুহু করে। আশঙ্কিত হয়ে রয়েছেন দামোদরের মানাচর এলাকার বাসিন্দারা।

অন্যদিকে বড়জোড়া দক্ষিণের কাঁটাবাধ ও হাট আশুড়িয়া সংযোগ রাস্তার সেতু জলের তলায়। এখানের জোডে কানায় কানায় জল বইছে। দুপারের মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। অনেকেই ঘুরপথে যাতায়াত করছেন। সেতুর উপর দিয়ে প্রবল বেগে জল বইলেও বেশ কিছু যানবাহনকে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার দেখা যায়। এই জোড় এলাকায় মুরগির একটি পোলট্রি ফার্ম জলের তলায়। বহু মুরগি মারা গেছে। ঘুটগড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তেঁতুলপোয়া গ্রামটিও জলমগ্ন হয়ে গেছে। গ্রামের রাস্তায় কজওয়ে দিয়ে জল বইছে। শুক্রবার সকাল থেকে জলমগ্ন গ্রামগুলি পরিদর্শন করেন বড়জোড়ার বিধায়ক অলক মুখার্জি। তিনি বলেন, এবছর বড়জোড়ার মানুষ এই প্রথম ভারি বর্ষণের মুখ দেখলেন। চাষ প্রায় হয়নি বললেই চলে। আচমকা এই বৃষ্টিতে চুনপোড়া গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে জল ঢুকেছে বলে জানান অলক মুখার্জি। তবে এখনই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আর বৃষ্টি না হলে শুক্রবার রাতেই জল নেমে যাবে বলেই তার ধারণা। তবে ক্ষয়ক্ষতি খুব একটা না হলেও অলকবাবু আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত নিম্নচাপ কতটা প্রভাব ফেলবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা ব্লক প্রশাসনকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি থাকতে বলেছি। পাশাপাশি বর্তমান অবস্থার কথা জেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে চুনপোড়া সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে জলমগ্ন হওয়ার জন্য গ্রাম সংলগ্ন ট্রান্স দামোদর খোলামুখ খনি কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছে বিজেপি ও সিপিএম। বিজেপির মন্ডল সভাপতি গোবিন্দ ঘোষ বলেন, কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষ জল নিকাশি নালা গুলি কোলিয়ারি খনন করতে গিয়ে মাটি পাথর সহ নানা বর্জ্য ফেলে বন্ধ করে দিয়েছেন। বারবার বলা সত্ত্বেও নিকাশি পথগুলি খোলেনি। ফলে চুনপোড়া গ্রামে জল ঢুকেছে। এর সব ক্ষতিপূরণ কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে।

অন্যদিকে সিপিআইএম নেতা সুজয় চৌধুরীর অভিযোগ, চুনপোড়া গ্রামের কয়েকজন কৃষকের জমি অধিগ্রহণ না করেই তার উপর মাটি ফেলে ভরাট করে দিয়েছে। সেই জমিতে গত ৮- ১০ বছর চাষ পর্যন্ত করতে পারেননি। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন ও কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষের সাথে বারবার আলোচনা করা হয়েছে। তারপরও জমি অধিগ্রহণ বা কিম্বা মাটি সরিয়ে নেওয়া কিছুই করেননি কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষ। ফলে অল্প বৃষ্টি হলেও চুনপোড়া গ্রামে জল ঢুকে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *