রাজেন রায়, কলকাতা, ৩১ আগস্ট: কিছুদিন আগেই বাড়ি থেকে অনেক দূরে বদলির প্রতিবাদে বিকাশ ভবনের সামনে শিক্ষিকাদের বিষপান প্রত্যক্ষ করেছে রাজ্যবাসী। এবার প্রায় একইরকম ঘটনা প্রত্যক্ষ করল কলকাতা মেডিকেল কলেজ। স্বাস্থ্য দফতরের বদলি নীতিকে কাঠগড়ায় তুলে আত্মঘাতী সরকারি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক। হাসপাতালের বেডে দু’সপ্তাহের লড়াই শেষে মারা গেলেন চিকিৎসক অবন্তিকা ভট্টাচার্য।
যেদিন গায়ে আগুন ধরিয়েছিলেন, ঠিক তার কয়েক ঘণ্টা আগেই ফেসবুকে পোস্ট করেন, ‘কী করলে শান্তি পাবো? চাকরি ছাড়লে?” আট বছর জেলায় চাকরি করার পরে আবার জেলাতেই বদলি… কোনও পদোন্নতি ছাড়াই… আর নিতে পারছি না।’ তারপরই ১৬ অগস্ট বেহালার বাড়িতে গায়ে অ্যালকোহল ঢেলে গায়ে আগুন লাগিয়ে নেন চিকিৎসক অবন্তিকা ভট্টাচার্য।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ফেসবুক পোস্টের পাশাপাশি স্বাস্থ্য দফতরে ফোন করে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন অবন্তিকা। দু’সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পরে সোমবার এসএসকেএমে মৃত্যু হয় বছর চল্লিশের চিকিৎসকের।
কমিউনিটি মেডিসিনের অ্যাসিস্ট্যান্ট পদমর্যাদার চিকিৎসক মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে আট বছর কাজ করার পরে ডায়মন্ড হারবারে বদলি হয়েছিলেন। স্বামী মুর্শিদাবাদের নামী স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। আট বছরের মেয়ে অটিজমে আক্রান্ত। সরকারি চিকিৎসকের ফেসবুক পোস্টে কাঠগড়ায় স্বাস্থ্য দফতরের বদলি নীতি। দীর্ঘদিন ধরেই স্বাস্থ্য দফতরের বদলি নীতি নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। বাম আমলে জোন ভিত্তিক একটা বদলি নীতি ছিল। সকলকে চাকরি জীবনের এককাল জেলা বা গ্রামীণ হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়ার নিয়ম ছিল। পাঁচ বছর জেলায় পরিষেবা দেওয়ার পরে তাঁদের বাড়ির কাছে সুবিধামতো পোস্টিং দেওয়া হত। সন্তান বা পারিবারিক সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে যাতে বাড়ির দূরে যেতে না হয়, সেই বিষয়টিও অগ্রাধিকার পেত। কিন্তু এখন কার্যত কোনও বদলি নীতি মানা হচ্ছে না বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে চিকিৎসক সংগঠনগুলি। চিকিৎসক নেতা উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অবন্তিকার পরিবারের পাশে আমরা আছি। চিকিৎসক ও শিক্ষক চিকিৎসকরা বদলির সমস্যায় ভুগছেন। তাঁদের মানসিক অবস্থা কোন জায়গায় পৌঁছাচ্ছে, তার একটা খারাপ উদাহরণ আমরা দেখলাম। বিগত ১০ বছর ধরে বদলির নীতি নিয়ে ভুগছেন চিকিৎসকরা। বদলিতে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। চিকিৎসকদের বাড়ি থেকে বহু দূরে কাজ করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে, সেটা কিন্তু বেছে বেছে কয়েকজন চিকিৎসকের ক্ষেত্রে। সকলের ক্ষেত্রে নয়। অবন্তিকার বাচ্চাটি অসুস্থ। অবন্তিকা হাসিখুশি মেয়ে ছিল। এটা মেনে নেওয়া যায় না।”