স্বরূপ উত্তর, উত্তর দিনাজপুর, ৩১ অক্টোবর: করোনার কোপে এবার জৌলুশহীন রায়গঞ্জের টেনোহরি গ্রামের ঐতিহ্যবাহী লক্ষ্মীপুজো। নেই চন্দননগরের আলোকসজ্জা, নেই সাংস্কৃতিক বা বিচিত্রা অনুষ্ঠানের আয়োজন কিংবা মেলা। করোনায় এবার সবটাই ফিকে হয়ে পড়েছে৷ প্রভাব পড়েছে প্রতিমাতেও। খুব স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ টেনোহরি গ্রামের বাসিন্দাদের।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী প্রতি বছর মা লক্ষ্মীর কৃপায় গ্রামের মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে সোনার ফসলে। কথিত আছে রায়গঞ্জ ব্লকের টেনোহরি গ্রামের বাসিন্দারা অনুর্বর জমিতে ফসল না হওয়ায় চরম কষ্টের মধ্যে কাটাতেন। সেইসময় তাঁরা তাঁদের এই বিপদ থেকে মুক্তির জন্য গ্রামের প্রতিটি ঘরে লক্ষ্মী দেবীর আরাধনার সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক তার পরের বছর থেকেই গ্রামের মাঠ সোনার ফসলে ভরে ওঠে। আর সেই থেকে টেনোহরি গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে মহা ধুমধামের সাথে লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা হয়ে থাকে। টেনোহরি গ্রামে লক্ষ্মীপুজোর আড়ম্বর হার মানায় শহরের অনেক বড় দুর্গাপূজা কমিটিকেও। বিশালাকৃতির লক্ষ্মীপ্রতিমা থেকে শুরু করে সুবিশাল মন্ডপ আর চন্দননগরের আলোকসজ্জায় ঝলমলিয়ে ওঠে কোজাগরী পূর্ণিমার রাত৷ তিনদিন ধরে লক্ষ্মীপুজো ঘিরে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন গ্রামের বাসিন্দারা।
লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে বসে বিশাল মেলাও। কিন্তু এবছর করোনা সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে। গ্রামের গৃহবধূ অষ্টমী দাস জানিয়েছেন, প্রতিবছর মহা ধুমধামের সাথে লক্ষ্মীপুজো হয় এই গ্রামে। বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষ পুজো দেখতে আসেন। এই লক্ষীপুজোকে ঘিরে ব্যাপক আনন্দ হয়। কিন্তু এবার করোনার কারনে গ্রামে কোনও অনুষ্ঠান বা মেলা হচ্ছে না। নেই ডিজে বা চন্দননগরের আলোকসজ্জা। নিয়মরক্ষায় শুধু পুজোটুকুই করা হচ্ছে।
মালক্ষ্মীর কাছে তাদের প্রার্থনা করোনা অতিমারির যেন অবসান হয়। আগামী বছরে আবার সকলে যেন আনন্দ উৎসবে মেতে উঠতে পারে। গ্রামের প্রবীন বাসিন্দা জীবন কৃষ্ণ দাস জানিয়েছেন, গ্রামের সিংহভাগ মানুষই কৃষিকাজের সাথে যুক্ত। বহু বছর ধরে গোটা গ্রামজুড়ে মহা ধুমধামের সাথে লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা হয়ে আসছে। তবে করোনা সংক্রমণের কারনে এবছর সরকারী নির্দেশ মেনে পুজোর আয়োজনে কাটছাঁট করা হয়েছে।