বাঘ আসবে! ৪০০ হরিণ ছাড়া হচ্ছে বক্সায়

আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ২০ নভেম্বর: বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে অসম থেকে আনা হবে বাঘ। ইতিমধ্যেই দুই রাজ্যের চুড়ান্ত সম্মতি মিললেও কবে সেই বাঘ এনে বক্সার জঙ্গলে ছাড়া হবে তা এখনও চুড়ান্ত হয়নি। তবে বাঘেদের খাদ্যের আগাম জোগান হিসেবে আগামী মাসে আর এক দফায় হরিণ ছাড়া হচ্ছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পতে। ৪০০-র বেশি চিতল হরিণ(স্পটেড ডিয়ার) ছাড়া হবে। বিষয়টিকে সামনে রেখে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে বনদপ্তরে।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে প্রতিবেশী রাজ্য অসম থেকে বাঘ নিয়ে আসাটা প্রায় ঠিক। তবে বাঘ আনার আগে বাঘেদের নিজস্ব স্বাভাবিক এলাকা স্বাভাবিক রাখতেই মূলত গত ৫ বছর ধরে “প্রে বেস” নির্মাণের কাজ চলছে বক্সা বাঘ বনে। যেহেতু বাঘ বাস্তুতন্ত্রতে সবচেয়ে উপরে থাকে তার নিচের দিকে এক্কেবারে ঘাষবন, তৃণভোজীদের অস্তিত্বকে জঙ্গলে বজায় রাখতে গোটা বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প জুড়ে তাই ধাপে ধাপে কাজ চলছে।

উল্লেখ্য, এর আগেও বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পতে দুই দফায় প্রায় ২০০ র বেশি চিতল হরিণ ছাড়া হয়। তবে সম্বর ছাড়া হয়নি।এবারও চিতল হরিণ ছাড়া হচ্ছে। জানা গেছে, আগামী মাসেই বাঘবনে রাজ্যের বিভিন্ন হরিণ সংরক্ষণ কেন্দ্র থেকে নিয়ে এসে ছাড়া হবে চারশো চিতল হরিণ। সবকিছুই চলছে কেন্দ্রীয় বাঘ সংরক্ষণকারী সংস্থা ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটির পথনির্দেশ মেনে।

অসম থকে ছয়টি বাঘ আসার আগে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের খাদ্য শৃঙ্খল আরও অনেকটাই শক্তিশালী হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চিতল হরিণদের স্বাভাবিক প্রজনন যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেই জন্য পুরুষ মাদির ১ঃ৫ অনুপাতে হরিণ ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বনদপ্তর। রাজ্যের মুখ্যবনপাল রবিকান্ত সিনহা জানিয়েছেন, “ভিনরাজ্য থেকে বাঘ আনার প্রক্রিয়া একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। তার আগে আমাদের অনেকগুলি বিষয়কে সুনিশ্চিত করতে হবে। তারমধ্যে খাবারের যোগান সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই নতুন করে আরও চারশো চিতল হরিণ বক্সায় ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।”

উল্লেখ্য, চিতল হরিণ দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। যেকোন অরন্যের পরিবেশে এরা খুব দ্রুত নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। আবার বাঘের খাবার হিসেবেও খুব সহজ টার্গেট এই চিতল হরিণ। আবার রাজ্যের বিভিন্ন সংরক্ষণ কেন্দ্র, অভয়ারণ্যে চিতল হরিণ এর অভাব নেই, সহজলভ্য।সহজেই বহন করে তুলে আনা যায়। স্বাভাবিক ভাবেই বাঘের খাদ্য হিসেবে আপাতত চিতল হরিণই প্রথম পছন্দ বনদপ্তরের। শিলিগুড়ি থেকে ন্যাফের কোঅর্ডিনেটর অনিমেশ বসু বলেন, “বাঘ আসবে ঠিকই। তবে জঙ্গলে খাদ্যশৃঙ্খল ঠিক রাখতেই হবে। সেজন্য ঘাষবন, তৃণভোজী প্রাণীদের নিয়ে খাদ্যশৃংখল সাজানোর কাজ চলছে।”

এদিকে, বক্সায় ঠিক কবে নাগাদ রয়েল বেঙ্গল টাইগার আসতে চলেছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে রাজাভাতখাওয়া, জয়েন্তী, নিমাতি সহ গভীর জঙ্গলের বিভিন্ন এলাকায় রেকর্ড সময়ে ঘাষবন তৈরি হয়েছে। আপাতত হাতি, বাইসন সহ বিভিন্ন ধরনের হরিণের দখলেই রয়েছে ঘাষবন। উল্লেখ্য, একটি সময়ে বক্সায় যথেষ্ট পরিমানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্ব থাকলেও বর্তমানে বক্সায় কার্যত দীর্ঘদিন বাঘের অস্তিত্ব ধরা পরেনি।বাঘ সুমারিতেও আশাব্যঞ্জক ফলাফল উঠে আসেনি। বাঘ নিয়ে একটা সংকট তৈরি হওয়ার ফলে ভিনরাজ্যের জঙ্গল থেকে বাঘ আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি জঙ্গলের কোর এলাকায় জনবসতি থাকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। পরিবেশ সমস্যায় পড়ায় ইতিমধ্যে লজ, রিসর্ট, হোটেল নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও হয়েছে। তবে ভিনরাজ্য থেকে বাঘ এনে বক্সায় বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে রাজ্য বনদফতর সবরকম পদক্ষেপ গ্রহন করতে বদ্ধপরিকর তা বলাই যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *