লাগাতার প্রেমের প্রস্তাব মেনে না নেওয়ায় কিশোরীকে অপহরণ করে লাগাতার হুমকি, শান্তিপুরে থানার দ্বারস্থ পরিবার

স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ৩০ মে: প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কিশোরীকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে লাগাতার হুমকি, থানার দ্বারস্থ পরিবার। নদিয়ার শান্তিপুর থানার গবারচর অঞ্চলের ঘটনা।

কিশোরীর বয়স মাত্র ১৫ বছর। সে দশম শ্রেণির ছাত্রী। তাদের বক্তব্য, সরকার যখন পড়াশোনার জন্য এত আর্থিক সহযোগিতা করছে সেখানে বিয়ের প্রশ্নই ওঠে না। তাই ছেলের বাড়ির প্রস্তাব নাকচ করে শান্তিপুর শহরের বেলঘড়িয়া দু’নম্বর গবারচর এলাকার নরেন বিশ্বাস। এরপর বাড়িতে এসে পাশের গবারচর পূর্ব পাড়ার দুলাল বিশ্বাসের ছেলে সুফল বিশ্বাস বেশ কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে এসে হুমকি দিয়ে যায় যে, তার দেওয়া প্রেম প্রস্তাবে রাজি হলে তাকে বিয়ে না করলে প্রাণে মেরে দেওয়ার। এমনকি বিষয়টি থানা পুলিশ বা এলাকাবাসীদের জানানোয় প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি আসে, এমনটাই অভিযোগ নরেন বাবুর।

তার স্ত্রী অর্থাৎ ওই কিশোরীর মা অনিমা বিশ্বাস বলেন, তাদের এলাকায় এভাবেই বেশকিছু কিশোরীকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে বিয়ে হয়েছে এর আগে। আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ার কারণে অনেকেই পরবর্তীতে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন, তবে মোহ কাটতেই কিছুদিনের মধ্যে অত্যাচার করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাপের বাড়িতে। তবে অনিমাদেবী এবার নিজের মন শক্ত করেছেন এলাকার কোনো মেয়ের এমন করে বিয়ে হতে দেবেন না। তিনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তার মেয়ের অপহরণকারীর।

তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসন আইন-আদালতের উপর তার পূর্ণ আস্থা আছে। মেয়েকে যেখানে আটকে রাখা হয়েছে সেখান থেকে নিশ্চয়ই উদ্ধার করা যাবে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অনেকেই ভাবছেন মেয়ের সাথে কোনো প্রণয়ঘটিত সম্পর্ক ছিলো, আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, সে ফিরে আসলে সব স্পষ্ট হবে। তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে।

কিশোরীর বাবা নরেন বিশ্বাস বলেন, ২৭ তারিখ সন্ধ্যার পর থেকে নিয়মমতো ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর, প্রেম প্রস্তাবে বার বার বিরক্ত করা ছেলেটির বাড়িতে আমি যাই, সে বাড়িতে না থাকার কারণে সন্দেহ আরও বাড়ে। এরপর পরিবারের অন্য সদস্যরাও পলাতক। অপহরণকারী সুফল বিশ্বাস ২৭ মে তার সোশ্যাল মিডিয়ার স্টোরিতে আমার মেয়ের একটি ছবি পোস্ট করে তা আবার ডিলিট করে দেয় পরের দিন। যার স্ক্রিনশট রাখা রয়েছে আমাদের কাছে। এর পর ২৮ তারিখ একটি নাম্বার থেকে আমার মোবাইলে ফোন করে তাকে মেনে নেওয়ার হুমকি দেখায় সে। গতকাল অর্থাৎ ২৯ মে আমার মেয়ে আতঙ্কিত অবস্থায় একটি অন্য মোবাইল থেকে কান্নাকাটির সাথে ফোন করে জানায় তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য, লোকেশন জানানোর আগেই মোবাইলটা তার হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয় এমনটাই মনে হয়েছে। এরপর থেকে সেই মোবাইলটা পর্যন্ত সুইচ অফ। প্রশাসনের কাছে নরেন বাবুর প্রশ্ন, কিশোরীকে তুলে নিয়ে গিয়ে এভাবে লাগাতার হুমকি! দু-দুটো মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করে অবিলম্বে তার মেয়েকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেওয়া হোক তাদের কাছে। কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক অপহরণকারীকে, যাতে কোনো পরিবারের কিশোরীর প্রতি এই রকম অত্যাচার আগামীতে না হয়। গোটা ঘটনায় শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।

সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে তৎপর শান্তিপুর থানার পুলিশ সহ গোটা জেলার পুলিশ প্রশাসন। চাইল্ড লাইনও তৎপর রয়েছে ঐ কিশোরীর উদ্ধারের বিষয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *