মাড়গ্রামে দুই তৃণমূল কর্মীকে বোমা মারার ঘটনায় অপসারিত পুলিশ সুপার

আশিস মণ্ডল, বীরভূম, ৫ ফেব্রুয়ারি: দুই তৃণমূল কর্মীকে বোমা মেরে খুন করার অভিযোগ উঠল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ছয় কংগ্রেস নেতা কর্মীকে। এদিকে তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় সরিয়ে দেওয়া হল বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্র নাথ ত্রিপাঠিকে। মৃতরা হল নিউটন শেখ (৩৭) ও লাল্টু শেখ (৩৮)। দুজনেরই বাড়ি বীরভূমের মাড়্গ্রাম থানার হাসপাতাল পাড়ায়। ঘটনাটি ঘটেছে, শনিবার রাত ৯ টার দিকে মাড়্গ্রামের হাসপাতাল পাড়ায়।

অভিযোগ, বাড়ির কাছে দুষ্কৃতীরা ঝোপের মধ্যে থেকে মোটর বাইক লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে। বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নিউটনের। রবিবার সকালে কলকাতার পিজি হাসপাতালে মৃত্যু হয় লাল্টু শেখের। মাড়্গ্রাম ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ভুটু শেখের ভাই লাল্টু। ঘটনার পরেই উভয় পক্ষের বোমাবাজিতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রাতেই গ্রামে পৌঁছে যান তৃণমূলের রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লক সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। তিনি স্বজনহারা পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি উত্তেজিত কর্মীদের শান্ত করেন।

নিউটনের স্ত্রী ফিরদৌসি বিবি বলেন, “আমার স্বামীকে জাহির শেখ, আইনাল শেখ, সফিক শেখ, সুজাউদ্দিন শেখরা খুন করেছে। রাতে ওরা মোটর বাইকে ফিরছিল। হাসপাতালের কাছে কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বোমা মারার খবর পায়। ঘটনাস্থলেই স্বামীর মৃত্যু হয়। আমি ওদের শাস্তি চাই। ওরা কংগ্রেস করে। আমার স্বামী তৃণমূল করত। রাজনৈতিক কারণেই স্বামীকে খুন করেছে”।

রবিবার সকালে মাড়্গ্রামে যান তৃণমূলের রামপুরহাট ২ নম্বর ব্লক সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায়, হাঁসন কেন্দ্রের বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায়, বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। চন্দ্রনাথবাবু বলেন, “প্রধান ভুটু শেখরা এলাকায় ভালো কাজ করছে। মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে আছে। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। মাড়্গ্রামকে অশান্ত করতেই বিরোধীরা এই কাজ করছে। এই এলাকার আগে বিধায়ক ছিলেন কংগ্রেসের মিল্টন রশিদ। তিনি দিন কয়েক আগে মাড়্গ্রামে উত্তেজনা মূলক বক্তব্য রেখে যায়। ওইদিন সুজাউদ্দিনরা বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদান করে। তারপর থেকেই খুনের পরিকল্পনা করছিল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা”।

এদিকে ঘটনার জেরে জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্র নাথ ত্রিপাঠিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাকে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর, ওএসডিতে বদলি করা হয়। নতুন পুলিশ সুপার করা হয়েছে ভাস্কর মুখোপাধ্যায়কে। অবশ্য বদলির অর্ডারে ৪ জানুয়ারি দেখানো হয়েছে। জেলা ছাড়ার আগে এদিন বিকেলে মাড়্গ্রামে যান নগেন্দ্র নাথ ত্রিপাঠি। তিনি বলেন, “একটি গণ্ডগোলের মীমাংসার জন্য ওদের দুজনকে ডাকা হয়। তারা মোটর সাইকেলে যাচ্ছিল। সেই সময় তাদের লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। দুই মূল অভিযুক্ত আইনুল শেখ এবং জাহির শেখ। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে ১৫ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তার মধ্যে সুজাউদ্দিন শেখ সহ মোট ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে”।

পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ঝাড়খণ্ড তত্ত্বকে সমর্থন করেছেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, “যেহেতু ঝাড়খণ্ড বর্ডার খুব কাছে। ফলে সেখান থেকে দুষ্কৃতী এসেও খুন করতে পারে। আমরা সমস্ত ঘটনা তদন্ত করে দেখব”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *