স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ২৯ নভেম্বর: জন্ম থেকেই এক চোখের দৃষ্টি হারিয়েছিল একরত্তি ইউসুফ আলী শেখ। দেখতে দেখতে কেটে যায় ৯টা বছর। বর্তমানে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ইউসুফ। একটা সময় ইউসুফের চোখ আর ভালো হবে না বলেই ধরে নিয়েছিলেন পরিবার, কিন্তু অবশেষে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের প্রচেষ্টায় ভাগ্যের চাকা খুলল ছোট্ট ইউসুফের।
নদিয়ার শান্তিপুরের গোপালপুর তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রোজিনা বিবির কোনো রকমে সংসার চলে। স্বামী পেশায় দিনমজুরেল। ইউসুফ জন্মগ্রহণের পরেই তার ডান চোখ দৃষ্টিহীন ছিল, এরপর ধীরে ধীরে বড় হওয়ার সাথে আরো অবনতি হয় চোখের দৃষ্টির। হালকা রশ্মি ছাড়া কিছুই দেখতে পেত না সে।
বাড়ির ঢিল ছড়া দূরত্বে রয়েছে কাজী নজরুল বিদ্যাপীঠ প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেখানে বর্তমানে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে ইউসুফ। পরিবারের দরিদ্রতার কারণে ইউসুফকে ভালো হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারেনি মা রোজিনা বিবি। গত কয়েকদিন আগে ওই বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করা হয়, সেখানেই ইউসুফের চোখ দেখে চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন এখনো সময় আছে দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেতে পারে ইউসুফ। সেই মতো প্রধান শিক্ষকের একাধিকবারের প্রচেষ্টায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শান্তিপুর ফুলিয়ার প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চক্ষু বিভাগের চিকিৎসকের কাছে। তার পরামর্শতেই শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হয়। গত মঙ্গলবার বিরল অস্ত্রোপচার করে শান্তিপুর হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রদীপ কুমার দাস। হয় সফল অস্ত্রোপচার। বর্তমানে দুটি চোখে সমান ভাবে দেখতে পাচ্ছে ইউসুফ। ছেলে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়াতে এখন বেজায় খুশি ইউসুফের মা রোজিনা বিবি ও তার বাবা।
তবে এ প্রসঙ্গে শান্তিপুর হাসপাতালের সুপার তারক বর্মন বলেন, এই ধরনের অস্ত্রোপচার বড় বড় মেডিকেল কলেজে হয়ে থাকে। সরকারি হাসপাতালগুলিতে পরিকাঠামো না থাকায় বিরল অস্ত্রোপচার ঝুঁকিপূর্ণ হয়। কিন্তু ইউসুফ নতুন করে দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাওয়ায় আমরা প্রত্যেকটি চিকিৎসক খুশি। কারণ জন্মগত দৃষ্টি শক্তি হারানো মানে তাকে অন্ধত্ব বলা হয়ে থাকে। আগামী দিনে শিশুটির যাতে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয় সেই কামনা করি।