আমাদের ভারত, ৫ আগস্ট: প্রধানমন্ত্রী দেশত্যাগের পরেই তাঁর বাসভবন দখলে চলে গেছে বিক্ষোভকারীদের। এরপরই যে চাঞ্চল্যকর ছবি সামনে এসেছে তাতে শিহরিত বিশ্ব। যে মুজিবুর রহমানের হাত ধরে বাংলাদেশ একসময় স্বাধীন হয়েছিল সেই বঙ্গ বন্ধুর মূর্তিতে পড়েছে হাতুরির বারি। টুকরো টুকরো করা হচ্ছে মুজিবুর রহমানের মূর্তি।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তার বাসভবনে ঢুকে খুন করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের। ধানমন্ডির ৩২- এর বাসভবনে স্বপরিবারে তাকে হত্যা করা হয়। মুজিবুর রহমান ছাড়াও খুন হয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী, চার ভাই, দুই পুত্রবধূ সহ বহু মানুষ। কিন্তু সেই সময় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গ বন্ধুর দুই মেয়ে হাসিনা ও রেহানা। কারণ সেই দিন তারা ছিলেন বিদেশে।
আগস্ট মাস বাংলাদেশের কাছে শোকের মাস। আর সেই আগস্টেই আবারো উত্তাল হয়েছে এই পদ্মা নদীর তীর। ৫০ বছরের মাথায় বাংলাদেশেই ভাঙ্গা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ।বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়েছেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের স্মৃতি জাদুঘরে।
এই বাড়িতে প্রায় ৫০ বছর আগে নিহত হয়েছিলেন তিনি। পরে মুজিব কন্যা হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই ৩২ ধানমন্ডিকে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে পরিণত করেন। সোমবার দুই বোন দেশ ছাড়তেই ফের হামলা হয়েছে ৩২ ধানমন্ডির বাড়িতে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে মুজিব স্মৃতি।
প্রায় গোটা জুলাই মাস ধরে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ। আন্দোলনের সুত্রপাত হয়েছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে। কিন্তু শেষ কয়েক দিনের আন্দোলন, সংঘর্ষ, মৃত্যুর পর বাংলাদেশ আদালত কোটায় আমূল পরিবর্তন আনে। তারপর কয়েকদিন আন্দোলন কিছুটা স্থিমিত হলেও ফের আগুন জ্বলে হাসিনা সরকার হটাও দাবিতে। শুক্রবার থেকে ফের দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনের আঁচ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সব সদস্যদের পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি নিয়ে পথে নামে বৈষম্য বিরোধী বিক্ষোভকারীরা। শনিবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মঞ্চ জানিয়ে দিয়েছিল রবিবার থেকে চলবে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ফের ঘনীভূত হওয়া আন্দোলনকে ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গণভবনে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু সেটা খারিজ করে শনিবার নাহিদ ইসলাম জানিয়েছিলেন, রবিবার থেকে সারা দেশজুড়ে শুরু হবে সর্বাত্মক অসহযোগ। কার্যত স্পষ্ট ছিল ফের মুখোমুখি হতে চলেছে সরকার পক্ষ ও বিক্ষোভকারী পক্ষ। রবিবার আন্দোলনে দেশজুড়ে নিহত হন শতাধিক মানুষ। পরিস্থিতি আরো জটিল হয় সোমবার। লং মার্চ টুর জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে জমায়েত হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ। বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় সংঘর্ষ। বেলা বাড়তেই শোনা যায় পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন হাসিনা। যাতে শীলমহর দেন দেশের সেনা প্রধান। তিনি ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশে গঠিত হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এরপরেই গণভবনে ঢুকে পড়েন কাতারে কাতারে বিক্ষোভকারীরা। কয়েক ঘন্টায় যে ছবি সামনে এসেছে তাতে দেখা গেছে, কেউ শুয়ে আছেন বড় বিছানায়, কেউ রান্নাঘরে খাবার খাচ্ছেন। বাংলাদেশ সংবাদ মাধ্যম সূত্রে একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙ্গচুর করছে বিক্ষোভকারীরা। আওয়ামী লিগের ধানমন্ডি ও ঢাকা জেলার অফিসে কার্যত ভাঙ্গচুর চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে দেশের বহু জায়গায়। অভিযোগ, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙ্গচুর চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। বাংলাদেশের সংসদ ভবনেও আন্দোলনকারীরা ঢুকে পড়েছেন বলে জানাগেছে। শোকের আগস্টে
বাংলাদেশজুড়ে জ্বলেছে কেবল ক্ষোভের আগুন।