Chairman, TMC, Bangaon, সাত দিনের মধ্যে বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ না করলে ব্যবস্থা নেবে দল, জানালেন জেলা নেতৃত্ব

সুশান্ত ঘোষ, আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগণা, ৮ নভেম্বর: দলীয় নির্দেশের ৭২ ঘণ্টা কেটে গেলেও পদত্যাগ করেননি বনগাঁ পুরসভার প্রধান গোপাল শেঠ। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে শনিবার গোপাল শেঠকে শোকজের চিঠি পাঠালেন বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ, উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ শহরে গত চার বছরে কোনো উন্নয়ন হয়নি। যদিও দল থেকে গোপাল শেঠের দুর্নীতির কথা প্রকাশ্যে আনছে না। বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কৃত্তনিয়া বলেন, বনগাঁ আরটিও বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালীন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে গোপাল শেঠ। এছাড়া পৌরসভার সব কাজেই কাটমানি দিতে হয় গোপালবাবুকে। বনগাঁর মানুষ জানেন, তৃণমূল দলটাই কাটমানিতে চলে।

দলের জেলা নেতৃত্বের পক্ষ থেকে শুক্রবার চিঠি দিয়ে দলের নির্দেশ অমান্য করার কারণ জানতে চাওয়া হলো গোপাল শেঠের কাছে। পাশাপাশি আগামী সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে গোপালকে পদত্যাগ করতেও বলা হয়েছে। অন্যথায়, দল গোপাল শেঠের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে বাধ্য থাকবে বলেও তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

২০২২ সালে পুরসভা নির্বাচনে প্রথমবার কাউন্সিলর হয়েছিলেন গোপাল শেঠ। আর প্রথমবারেই তিনি দল এবং কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিতে বনগাঁ পুরসভার প্রধান হয়েছিলেন। এরমধ্যে ইছামতী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ শহরের ফল খুব খারাপ হয়েছিল। ২২টি ওয়ার্ডের সব কটিতেই হেরেছিল তৃণমূল। একদিকে বনগাঁ শহরে তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, অন্যদিকে চাহিদা অনুযায়ী নাকি নাগরিক পরিষেবায় ঘাটতি ছিল। যার ফলেই নাকি এমন ফলাফল বলে একাংশের মতামত। বিরোধীদের অভিযোগ, শহরের জল নিকাশি ব্যবস্থা বেহালের কারণে শহরের বেশ কিছু ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। জমা জল নিয়ে দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয় শহরের বাসিন্দাদের। এর পাশাপাশি শহরজুড়ে বেআইনি অটো, টোটো চলাচলে যানজট নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যে। কয়েক মাস আগে ভোট কুশলী সংস্থার সমীক্ষার রিপোর্টেও সেটাই উঠে আসে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই বনগাঁ পুরসভার প্রধান বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। এমনই খবর দলের অভ্যন্তরে। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই নানা মহলে জল্পনা শুরু হয়। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে পুরসভার প্রধানের পদ বদল নিয়ে। তাহলে সত্যিই কি বনগাঁ পুরসভার প্রধানের পদে বদল হচ্ছে? এই প্রশ্ন ঘুরতে থাকে বিভিন্ন মহলে।

দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্য অনুযায়ী, ৬ নভেম্বর গোপাল শেঠকে পুরপ্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জেলা নেতৃত্বের দাবি, দলীয় নির্দেশকে এখনও মান্যতা দেননি গোপাল শেঠ। এরপরেই শনিবার তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার কার্যালয়ে কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিশ্বজিত দাস। এদিন দুপুর একটায় পার্টি অফিসের বৈঠকে তৃণমূলের ১৯ জন কাউন্সিলরদের মধ্যে হাজির থেকেছেন ১৭ জন। কিন্তু জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে সহমত না হওয়ায় বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই বৈঠক ছেড়ে বেড়িয়ে যান দলের ৬ কাউন্সিলর। বৈঠকের শেষে বিশ্বজিত দাস সাংবাদিকদের বলেন, দলের নির্দেশ অমান্য করার কারণ জানতে চেয়ে আজ নতুন করে চিঠি দেওয়া হয়েছে গোপাল শেঠকে। দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই পদত্যাগের জন্য সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে পদত্যাগ না করলে দল কঠোর পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবে। যদিও এই বিষয়টি দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করে এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে কিছু বলতে চাননি গোপাল শেঠ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *