বাগবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের বাংলার বাড়ি নয়, নগদ টাকা দেবে পুরসভা

রাজেন রায়, কলকাতা, ১৫ জানুয়ারি: খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে আবার সব আগের মত করে দেবেন। সমস্ত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর পুরসভার তরফে ফিরহাদ হাকিম জানালেন, বিধানসভা ভোটের আগে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন সম্ভব হয়ে উঠবে না। সেই কারণে বাগবাজারের হাজারহাত বস্তিতে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে বাসস্থান তৈরি করে দেবে না পুরসভা। তার বদলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সরাসরি আর্থিক সাহায্য করা হবে। সেই সাহায্য নিয়ে পরিবারগুলি পুনরায় নিজেদের মাথার উপর ছাদ তৈরি করে নিতে হবে। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী খোদ পুনর্বাসনে কথা বলার পরেও ফিরহাদ হাকিমের এই ঘোষণায় কার্যত ক্ষুব্ধ বস্তিবাসীদের একাংশ। যদিও এই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছেন বস্তিবাসীদের আরেক অংশ।

হাজারহাত বস্তিতে বৃহস্পতিবারই ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। সেখানে দাঁড়িয়েই মমতা জানান, ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে সবার বাড়ি পুনরায় তৈরি করে দেওয়া হবে। তার জন্য যা যা করণীয়, সেই পদক্ষেপ ফিরহাদ হাকিমকে করার নির্দেশ দেন তিনি।

কিন্তু, স্থানীয়দের একটা বড় অংশ এই নিয়ে আপত্তি তুলে দাবি করেন, এতে একাধিক সমস্যা হবে। যাদের দু’কাঠা এলাকায় ঘর ছিল, তাদের বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে কোনও ভাবে উনিশ-বিশ হতে পারে। কোনও ভাবে বাড়ি আড়াই কাঠায় তৈরি হয়ে গেলে সমস্যায় পড়বেন পাশের জমির বাসিন্দা। কারণ সংকীর্ণ বস্তি এলাকায় এক-এক ফুট জায়গাও অনেক বেশি দামী। কোনও ভাবে জমির মাপ কম-বেশি হলে, এলাকাবাসীর মধ্যেও গণ্ডগোল লেগে যেতে পারে। বস্তি এলাকা হওয়ায় স্বাভাবিক নিয়ম মেনে আশপাশে থেকে জমি ছেড়ে বাড়ি তৈরি করা হয়নি। তাই নতুন করে বাড়ি তৈরি করতে গেলে এই সমস্যা হতে পারে।

হাজারহাত বস্তিতে এমন কিছু টিনের বাড়ি ছিল যা তিন তলা। বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ঘর তৈরি হলে তা দোতলার বেশি হবে না। ফলে জায়গা নিয়েও জট হতে পারে। তাই এলাকাবাসীর বক্তব্য, তাঁরা চান না সরকার বা পুরসভার পক্ষ থেকে কোনও বাড়ি করে দেওয়া হোক। হাতে নগদ টাকা পেলে তাঁরা নিজেরাই সুবিধামতো বাড়ি করে নেবেন। শেষপর্যন্ত স্থানীয়দের দাবিকে প্রাধান্য দিয়েই এদিন নগদ টাকা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ক্ষতিগ্রস্ত ১৩৮টি পরিবারকে। এদিনের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম, পুর কমিশনার বিনয় কুমার, বিশেষ কমিশনার তাপস চৌধুরী, এলাকার বিদায়ী জনপ্রতিনিধি বাপি ঘোষও। তবে পরিবারপিছু কত টাকা দেওয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত করে জানানো হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *