আমাদের ভারত, ১৬ ফেব্রুয়ারি: আদালতের নির্দেশে চাকুরি খুইয়েছেন বাঁকুড়া জেলার ওন্দা ব্লকের মেদিনীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যা পূর্ণিমা নন্দী দে। রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে গ্রুপ ডি পদে কর্মরত ১৯১১ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেয় আদালত। তার জেরে চাকরি হারা তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের স্ত্রী।
নিয়োগে অনিয়মের কারণে চাকরি বাতিল শিক্ষকদের তালিকাতেই নাম রয়েছে পূর্ণিমা নন্দী দে’র। তাঁর স্বামী ওন্দা ব্লকের তৃণমূল নেতা লক্ষ্মীকান্ত নন্দী। স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফ থেকে প্রকাশিত সেই তালিকায় ১৫৪০ নম্বরে নাম রয়েছে পূর্ণিমা দেবীর।
‘এখন মেয়ের পড়াশোনা চালাব কী করে?’ হাপুস নয়নে কান্না তৃণমূল নেতার স্ত্রীর— এই শিরোনামে একটি দৈনিকে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে এসেছে। পোস্ট করার ১০ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২৩-এ লাইক, মন্তব্য ও শেয়ার হয়েছে যথাক্রমে ৬৯৩, ১৯৫ ও ৪।
অরূপ দুয়ারি লিখেছেন, “সরকারি চাকরি দরকার ঠিক হয়েছে।” আকাশ কিস্কু লিখেছেন, “এখন পড়াশোনার জন্য টাকা জুটছে না? সরকারি স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা শেষ করে এখন নিজের ছেলে মেয়েদের পাবলিক স্কুল এ ভর্তি করছেন? এখন টাকার অভাবে পড়াশোনা চালাতে পারছেন না তাহলে চাকরিটা কিভাবে পেয়েছিল?“ অভিজিৎ চক্রবর্তী লিখেছেন, “চোরের মায়ের বড় গলা!” শুভাশিস পোল্লে লিখেছেন, “চাকরি পাওয়ার আগে যেভাবে আসছিল সে ভাবে।“
রাজর্ষি সামন্ত লিখেছেন, “পুকুর চুরি হচ্ছে। অন্য রাজ্যে গিয়ে বলতেও লজ্জা করে যে আমি পশ্চিমবঙ্গে থাকি।” লিটন বিশ্বাস লিখেছেন, “ও দিদি কাঁদবেন না। চপের দোকান দিন, না হলে ঝাল মুড়ি নিয়ে বেরোন। লক্ষ্মীর ভান্ডার তো আছে। স্বামীর বেকার ভাতা আছে। আর কি চাই। খালি চাই আর চাই, হয় আর না।” সজল কুমার সরকার লিখেছেন, “যেমন জালিয়াতি করে চাকুরিটা পেয়েছিলেন, তেমনি নতুন কোনো জালিয়াতি পদ্ধতি বের করে টাকা উপার্জন করে মেয়েকে পড়ান। দিদি জালিয়াতি করার বহু পথ খুলে দিয়েছেন।”
প্রদীপ দেবনাথ লিখেছেন, “চুরি করার থেকে ভিক্ষা করাটা অনেক সম্মানের।“ রঞ্জন তালুকদার লিখেছেন, “এরকম কান্না ৭০০ দিন ধরে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ছেলে মেয়েগুলো কেঁদে চলেছে। চাকরি পাওয়ার আগে যেভাবে আসছিল সে ভাবে।”
এই দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় স্বাভাবিকভাবে অস্বস্তি বেড়েছে ঘাসফুল শিবিরের। ওন্দা ব্লক তৃণমূলের সহ সভাপতি সুবোধ মণ্ডল বলেছেন, ‘কীভাবে লাইন করেছেন, সেটা ব্যক্তি লক্ষ্মীকান্ত জানেন। সে ব্যাপারে দল কিছু জানে না। আইন তার নিজের পথে চলবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।’
বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সদস্য বিশ্বনাথ দে এই প্রসঙ্গে বলেন, চাকরি পাওয়ার পর সবাই বলেন, ‘যোগ্যতায় পেয়েছি। কিন্তু আসল ঘটনা এখন সামনে আসছে। টাকা দিয়ে যে এভাবে চাকরি হয়, সেটা তো আজ জানা যাচ্ছে।’

