আশিস মণ্ডল, সিউড়ি, ৬ মার্চ: কয়লাখনি এলাকায় চড়কা কেটে আন্দোলন শুরু করেছে আদিবাসীরা। তাদের বিক্ষোভের জেরে টানা ৩ দিন ধরে বন্ধ দেউচায়-পাঁচামির খনন কাজ৷ আদিবাদীদের ধারাবাহিক আন্দোলনের আঁচ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেই জন্য দেউচা-পাঁচামিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। আটক করা হয়েছে আদিবাসী নেতাদের। যদিও এনিয়ে মুখ খুলতে চাননি প্রশাসনের আধিকারিকরা।
বৃহস্পতিবার বোলপুর থেকে দেউচা-পাঁচামি যাচ্ছিলেন আদিবাসী নেতারা৷ খবর পেয়ে পুলিশ তাদের থানায় ডেকে আটকে রাখে বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় ও এশিয়ার সর্ববৃহৎ প্রস্তাবিত কয়লা খনির কাজ তিনদিন ধরে বন্ধ। ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবে নিজেদের ভিটেমাটি ছাড়তে নারাজ তাঁরা৷
এই প্রসঙ্গে বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, “আমরা শিল্পের বিরোধী নই৷ তবে শিল্পের নামে আদিবাসীদের জল, জমি ও জঙ্গলের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে৷ সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে, চাকরি থেকে বঞ্চিত করে রাজ্যসভার সাংসদ তাঁর নিজের লোকেদের ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। কয়লা শিল্পের নামে পাথর তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তারজন্য আদিবাসী সমাজের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। এই আন্দোলন যাতে বাইরে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।”
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন থেকে দেউচা-পাঁচামিতে কয়লা খনির খনন কার্যের সূচনার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও জল, জঙ্গল, জমির অধিকার ছাড়তে নারাজ স্থানীয় মানুষজন৷ বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা৷ বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশই আদিবাসী। কোন রকমে বিক্ষোভ সামাল দিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি রাতের অন্ধকারে মুখ্যমন্ত্রীর মান বাঁচাতে শুরু হয় দেউচায় খনন কাজ৷ কিন্তু আন্দোলনের জেরে ফের বন্ধ খনন কাজ৷ যদিও, এই দেউচা-পাঁচামিতে প্রস্তাবিত কয়লা খনির বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই লড়াই-আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বাসিন্দারা৷ কারণ, এখানে ৩৪০০ একর জমিজুড়ে মজুত রয়েছে কয়লা৷ এই কয়লা উত্তোলন করতে হলে প্রায় ২০টি গ্রামকে অন্যত্র সরাতে হবে৷ কমপক্ষে ২১ হাজার মানুষকে পুর্নবাসন দিতে হবে৷ যার মধ্যে অধিকাংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। এছাড়া, কয়লা খনি হলে ধ্বংস হবে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, জলাভূমি, চারণভূমি৷ ভারসাম্য হারাবে পরিবেশের৷ তাই খনির জন্য ভিটেমাটি ছাড়তে নারাজ স্থানীয় বাসিন্দারা৷ আদিবাসীরা খননের মেশিনপত্র-সহ প্রশাসনিক লোকজনদের তাড়িয়ে দিয়েছেন৷ তবে গ্রামগুলির মোড়লদের নোটিশ পাঠিয়ে আলোচনায় বসার আবেদন করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। যদিও, কেউ তাতে রাজি হয়নি৷ কারণ, এর আগে প্রশাসনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকেও মেলেনি সমাধান সূত্র৷
দেউচা-পাঁচামির বাসিন্দাদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী আগেই জমিদাতাদের চাকরি, আর্থিক প্যাকেজ, পুনর্বাসন ঘোষণা করেছেন৷ অভিযোগ, ঘোষণাই সার, প্রতিশ্রুতি মত কথা রাখেনি সরকার৷ এদিনও, সাগরবাঁদি গ্রামে জমায়েত হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আদিবাসী মানুষজন। বীরভূম-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার আদিবাসীদের এই আন্দোলনের সামিল হওয়ার জন্য তাঁদের আহ্বান জানানো হয়েছে৷ সেইমত এদিন বোলপুর থেকে শিবু সরেনের নেতৃত্বে আদিবাসী নেতারা দেউচা যাওয়ার কথা ছিল৷ অভিযোগ, তার আগেই বোলপুর থানার পুলিশ তাঁদের ডেকে পাঠিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখে৷
শিবু সরেনের অনুগামী বিশ্বনাথ কিস্কু ও রাম সরেন বলেন, “৩ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আমাদের শিবুদাকে আটকে রেখেছে বোলপুর থানায়৷ দেউচায় আমাদের আদিবাসী ভাইবোনের সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে৷”
যদিও, এই নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি জেলা প্রশাসনের কোনো কর্তা৷