স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদীয়া, ২৪ মে:
গনাই বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম প্রচলিত এক পদবী। তন্তুবায় সম্প্রদায় প্রধান এই পদবী গণপতি থেকে উদ্ভূত। এরা গণপত্য সম্প্রদায়। এই উপাধি মহারাষ্ট্রের দক্ষিণে যেমন মেলে আবার কাশ্মীরে ধর্মান্তরিত মুসলমানদের মধ্যেও এই পদবী মেলে। কাশ্মীরের শ্রীনগরে রাস্তায় চলার সময়ে এই পদবী বিশিষ্ট বহু সাইনবোর্ড চোখে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গে এই পদবি বিশেষ চোখে পড়ে না বললেই চলে।
মুর্শিদাবাদ জেলায় চক ইসলামপুর এদের কিছু বসতি আছে। জাতীয় কংগ্রেস যে বছর জন্ম হয় ঠিক সেই সময় সেই বছর ধরে ইসলামপুরে এই গনাই পরিবারের প্রথম পত্তন করেন যিনি তিনি কৃষ্ণদাস গনাই। ওঁনারা বংশপরম্পরায় থাকতেন একসময় বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে। পরবর্তীতে ভাগ্যের অন্বেষণে চলে এসেছিলেন সত্যচরণ গনাই। ওঁনার পিতা ছিলেন তিনকড়ি গনাই। সত্যচরণ গনাইয়ের ছিল সাত সন্তান। এরমধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন আবার স্বাধীনতা সংগ্রামী তারা গনাই। এঁনারা থাকতেন কৃষ্ণনগরের ছুতোর পাড়ায় নিজস্ব একতলা বাড়িতে। আজও সেই পুরোনো ছাদ বিশিষ্ট খিলানের বাড়ি য়েছে। যদিও তার অনেকটাই কালের নিয়মে পরিবর্তন হয়েছে। পূর্বেও কৃষ্ণ দাসের উত্তরসূরী ডঃ অমরেন্দ্র গনাই ছিলেন কৃষ্ণনগরের সরকারি কলেজের অধ্যাপক কবি ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক।
১৯২১ সাল থেকে কবি কাজী নজরুল ইসলাম নদিয়ার কৃষ্ণনগরে থাকতেন। যেহেতু কৃষ্ণদাসের জ্যেষ্ঠপুত্র স্বদেশী করতেন সেহেতু তখন তার অনুরোধেই কবি এলেন তাদের ছুতোর পাড়ার এই বাড়িতে। যদিও সেটা খুব কম সময়ের জন্য। তিনি গনাই বাড়িতে এসে কিছুক্ষণ ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন আরও দু’একজন। তারাবাবুকে কবি কাজী নজরুল ইসলাম কিছু স্বদেশ মূলক কথাবার্তা শোনান। কিছু উপদেশও দেন। ইতিমধ্যেই কবির খোশ আমদেদ, নকিব এর মত রক্ত গরম করা কবিতা প্রকাশিত হয়ে গেছে। কবি কাজী নজরুল গনাই বাড়িতে যে কাঠের টুলটায় বসে ছিলেন সেই টুলটা আজও পরিবারে সযত্নে সংরক্ষিত আছে। প্রতিবছর ১১ জ্যৈষ্ঠ তাতে কবি নজরুলের ছবি রেখে পরিবারের লোকেরা কবিকে ফুল মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বাড়ির সদর প্রাচীরে শ্বেতপাথরের ফলকে কবির আগমন সংবাদ এখনও খোদিত আছে।
বিশিষ্ট লেখক ডাঃ অমরেন্দ্র গনাই এর লেখা “মনে পড়ে” এবং বংশের উত্তরপুরুষ অর্থাৎ তারাবাবুর ভ্রাতার দৌহিত্র মাজদিয়া রেল বাজার নদিয়া নিবাসী সুদীপ কুমার রায়ের “স্মৃতিতীর্থ ঘাটে ঘাটে” গ্রন্থে এ সম্বন্ধে বিস্তর লেখা আছে। নদীয়া জেলার কাব্যে একমাত্র কৃষ্ণনগরে থাকা গনাই পরিবারের কথা শোনালেন পঞ্চাশের কোঠা স্পর্শ করা নিজের ভ্রাতার দৌহিত্র সুজিতবাবু। জানালেন, “জানা নেই এইভাবে ৯৯ বছর ধরে অবিরামভাবে কোনও পরিবারে কাজী নজরুল ইসলামের স্মরণ হয় কি না?”