পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ অক্টোবর: একদা মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গল মহলের পিড়াকাটায় এই প্রথম হল বিগ বাজেটের দুর্গাপুজো। পুজোর পরিচালনায় রয়েছে পিড়াকাটা বাজার দুর্গাপুজো কমিটি।
জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের আতঙ্ক একসময় স্থানীয়দের রোজকার জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছিল৷ ব্যতিক্রমী ছিল না পশ্চিম মেদিনীপুরের পিড়াকাটা৷ সকাল থেকে রাত, মাও-আতঙ্ককে সঙ্গী করেই বেঁচে থাকতেন সেখানকার মানুষজন। প্রায় নিত্যদিনই শোনা যেত গুলির শব্দ। বাতাসে মিশে থাকত বারুদের গন্ধ। গামছায় মুখ ঢেকে এলাকায় ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছিল হার্মাদ আর মাওবাদীরা। নিরীহ মানুষজনকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে খুন কিংবা ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনাও নেহাত কম ঘটেনি। মাওবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে সিধু সরেন সহ পাঁচজনকে এনকাউন্টার করেছিল পুলিশ। মানুষের জীবন থেকে কার্যত মুছে গিয়েছিল উৎসবের আনন্দ। দুর্গাপুজোয় দল বেঁধে ঠাকুর দেখতে যাওয়া ভুলতে বসেছিল সেখানকার মানুষ। কিন্তু পালাবদলের পর পিড়াকাটা আর আগের অবস্থায় নেই। এখন বারুদের গন্ধ তো দূরঅস্ত, ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়নি পিড়াকাটায়। যাদের মধ্যে উৎসবের আনন্দ মুছে গিয়েছিল একসময়, তারাই ফের নতুন করে উৎসবে মেতে উঠবে এই দুর্গাপুজোয়।
এই নিয়ে সাত বছরে পা দিল একদা মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গল মহলের পিড়াকাটায় হওয়া এই পুজো। এবার প্রথম হল বিগ বাজেটের পুজো। পুজোর পরিচালনায় রয়েছে পিড়াকাটা বাজার দুর্গাপুজো কমিটি। প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হচ্ছে দুর্গা প্রতিমা ও মণ্ডপ। ঠাকুর দেখার জন্য উৎসাহী হয়ে রয়েছে এক সময় মাও-আতঙ্কে থাকা পিড়াকাটার মানুষ। এই গ্রাম্য এলাকায় এধরনের বিগ বাজেটের পুজো এই প্রথম হতে চলেছে।
দুর্গাপুজো কমিটির অন্যতম সদস্য পরিমল ধল বলেন যে, ২০০৮ থেকে ২০১০ ভয়াবহ মাও আতঙ্কের সেই দিনগুলোতে গ্ৰামের একমাত্র দুর্গা পুজো প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল। সন্ধের আগেই নামতো অন্ধকার। বাড়ি থেকে বেরনোটাই কার্যত দুঃসাহসের পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এলাকাবাসীদের কেউ কেউ বাঁচার জন্য জনসাধারণের কমিটিতে নাম লিখিয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের পর অবস্থা স্বাভাবিক হয়। এই বছর প্রতিমা তৈরি হয়েছে শিফন সুতো দিয়ে। মন্ডপ হয়েছে রাজস্থানের জয়পুরের অ্যালবার্ট হল মিউজিয়াম- এর আদলে। কিন্তু এবছর প্রত্যেকের মধ্যেই উৎসাহ তুঙ্গে। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত টানা পাঁচদিন ধরে থাকছে বিচিত্র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বস্ত্র বিতরণ ও রক্তদান কর্মসূচির পাশাপাশি নবমীর দিন পিড়াকাটা এলাকার পাশাপাশি পঞ্চাশটি গ্ৰামের প্রায় কুড়ি হাজার মানুষের জন্য খাওয়াদাওয়ার আয়োজন থাকছে।
পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য পরিমল ধল, গৌতম দাসরা বলেন, বাজারের প্রায় সমস্ত ব্যবসায়ী মিলেই এই দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছি। এই গ্রাম্য এলাকায় এধরনের বিগ বাজেটের পুজো এই প্রথম হতে চলেছে। তিনি আরো বলেন যে, মাওবাদী আতঙ্ক কাটিয়ে আমরা এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রথমে ৫ থেকে ৬ জন মিলে এই পুজোর আয়োজন করি। পরবর্তীতে এলাকার স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় প্রায় শতাধিক সদস্য নিয়ে এই পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। পুজোর পাশাপাশি আমরা নানা ধরনের সামাজিক কাজকর্মেও নিজেদের নিয়োজিত রেখেছি।